রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার পক্ষ থেকে উদ্ধার করা শিশুটির পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে। শিশুটির নাম মোহাম্মদ নীরব। তার বয়স দুই বছর ছয় মাস। তার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে।
২১ অক্টোবর প্রথম আলো অনলাইনে ‘শিশুটিকে রিকশাচালকের কাছে দিয়ে কোথায় গেলেন নারী যাত্রী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিন শেরেবাংলা নগর থানা থেকেও শিশুটির ছবি বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়েছিল।
নীরবের বাবা মিন্টু মোল্লার চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম জানালেন, প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখেই তাঁরা নীরবের খোঁজ পেয়েছেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, নীরব হারিয়ে গেছে, এ নিয়ে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার বাসে বসে মোবাইলে এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলেন। তখন পাশের সিটের এক যাত্রী জানান, প্রথম আলোতে হারিয়ে যাওয়া একটি শিশুকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের লিংকটি তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান ওই যাত্রী। শিশুটিকে দেখে নীরবকে চিনতে পারেন তিনি। এরপর শিশুটির বাবাকে খবরটি জানান।
এদিকে শেরেবাংলা নগর থানায় পরিচিত একজনকে ফোন করে নীরবের বিষয়টি নিশ্চিত হন সাইফুল ইসলাম। ততক্ষণে থানা থেকে আদালতের মাধ্যমে নীরবের ঠাঁই হয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে।
খবর পেয়ে নীরবের বাবা মিন্টু মোল্লা আজ মঙ্গলবার চরফ্যাশন থেকে ঢাকায় আসেন। ছোটমণি নিবাসে গিয়ে দূর থেকে নীরবকে দেখে আসেন। সে তখন অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, নীরব আদালতের মাধ্যমে ছোটমণি নিবাসে থাকায়, আদালতের অনুমতিতেই মিন্টু মোল্লা ছেলেকে ফেরত পাবেন।
২১ অক্টোবর শনিবার শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহাদ হোসেন এক রিকশাচালকের বরাত দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছিলেন। শুক্রবার রাত আটটার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে এক নারী শিশুটিকে নিয়ে রিকশায় ছিলেন। হুট করে ওই নারী কাজের কথা বলে রিকশা থামাতে বলে শিশুটিকে রিকশাচালককে একটু ধরতে বলেন। রিকশাচালক শিশুটিকে কোলে নেন। এরপর আর ওই নারীর কোনো পাত্তা নেই দেখে রিকশাচালক হাসপাতালের আনসার সদস্যদের জানান।
আনসার সদস্যরা আশপাশে ওই নারীর খোঁজ করতে থাকেন। এরপর তাঁরা পুলিশের জাতীয় সহায়তা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে শেরেবাংলা নগর থানায় ঘটনাটি জানান। তারপর শিশুটি সুস্থ আছে কি না, তা জানার জন্য শ্যামলীতে বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। থানায় দুদিন থাকার পর আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হয়।
মিন্টু মোল্লা প্রথম আলোকে জানান, তাঁর স্ত্রীর মানসিক সমস্যা আছে। তিনি কাউকে কিছু না বলে নীরবকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। এর আগেও তিনি এমন কাজ করেছেন।
মিন্টু মোল্লা বলেন, তিনি স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যতটুকু বুঝতে পেরেছেন তা হচ্ছে, নীরবকে রিকশাচালকের কোলে দিয়ে তিনি একটি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকেছিলেন। কিন্তু এরপর আর রাস্তা চিনে রিকশাচালকের কাছে যেতে পারেননি। ছেলেকে হারিয়ে ফেলার পর স্ত্রী মানসিকভাবে আরও অস্থির হয়ে পড়েন বলে জানান মিন্টু মোল্লা। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী কোনোভাবে গাজীপুরের শ্রীপুরে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে অন্য এক শিশুকে নিজের বাচ্চা বলে টানাটানি করতে থাকলে লোকজন ছেলেধরা ভেবে থানায় নিয়ে যান।
চার ছেলের বাবা মিন্টু মোল্লা বলেন, ‘স্ত্রী আমার মোবাইল নম্বরটি মনে রাখতে পেরেছিলেন। রোববার থানা থেকে আমার মোবাইলে ফোন দিলে আমি জানতে পারি স্ত্রী সেখানে আছেন। গাজীপুরে আমার বড় ভাই ইব্রাহিম মোল্লার কাছে আমার বড় ছেলে থাকে। ভাই ও ছেলে গিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন। আর এদিকে ঢাকা থেকে চাচাতো ভাই ফোন দিয়ে নীরবের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায়।’
গাজীপুর থেকে বড় ভাইয়ের সঙ্গে নীরবের মা নীলা বেগম আজ ঢাকায় এসেছেন। মিন্টু মোল্লা, ইব্রাহিম মোল্লা এবং সাইফুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগর থানায় গিয়ে নীরবকে কীভাবে ফেরত পাবেন তা নিয়ে কথা বলেছেন।