সবকিছু ঠিক থাকলে এস এম নাজিয়া সুলতানার সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর। ২০১৬ সালে বিয়ের পর একবার গর্ভপাত হয়। তাই এবার নাজিয়ার আকুতি ছিল যেন সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন। তা আর হলো না। আজ মঙ্গলবার সকালে ডেঙ্গুতে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজিয়ার মৃত্যু হয়।
নাজিয়া ৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (ডব্লিউটিও উইং) হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। গত শুক্রবার জ্বর আসার পর শনিবার ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। রোববার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে তিনি মারা যান।
নাজিয়া অনেক আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি মারা গেলে যাতে গাইবান্ধায় তাঁর বাবার কবরের পাশে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। স্বজনেরা তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণে এখন গাইবান্ধার পথে। লাশ নিয়ে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে।
আজ বিকেলে মুঠোফোনে কথা হয় নাজিয়ার স্বামী শাহরিয়ার জামিলের সঙ্গে। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জানালেন, নাজিয়া সুলতানার রক্তের প্লাটিলেট কমে ১৪ হাজারে নেমে গিয়েছিল। সে অবস্থায় অস্ত্রোপচার করে গর্ভের সন্তানকে বাঁচানোর আর কোনো উপায় ছিল না বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
শাহরিয়ার জামিল বলেন, তাঁর স্ত্রীর ডায়াবেটিস ছিল না। ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ার পর একজন চিকিৎসক বলেছিলেন সেগুনবাগিচার বারডেম মা ও শিশু হাসপাতালে নিতে। সেখানে নেওয়ার পর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্ত্রী সম্পর্কে বলতে গিয়ে শাহরিয়ার জামিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাজিয়া খুব সাদাসিধে ও হাসিখুশি ছিল। এখন যেখানে গেল, সেখানে ভালো থাকবে—এটাই চাওয়া।’
নাজিয়া খুব সাদাসিধে ও হাসিখুশি ছিল। এখন যেখানে গেল, সেখানে ভালো থাকবে—এটাই চাওয়া।শাহরিয়ার জামিল, নাজিয়া সুলতানার স্বামী
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে নাজিয়ার বন্ধু-স্বজনেরাও বলছেন, নাজিয়া সুলতানা সব সময় হাসিখুশি থাকতেন। তাঁর এভাবে মারা যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করতেন বলে নাজিয়ার মা (৬৫) তাঁদের খিলগাঁওয়ের বাসায় থাকতেন বলে জানালেন শাহরিয়ার জামিল। নাজিয়ার পরে তাঁর মায়েরও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তবে তিনি খাবার খেতে পারতেন বলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি, বাসাতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন মায়ের চোখের সামনে মেয়ে মারা গেলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা ছিলেন নাজিয়া সুলতানা। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
নাজিয়া সুলতানার চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি ছিল কি না জানতে চাইলে শাহরিয়ার জামিল বলেন, স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টিকে আর একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ইতিবাচক কাউন্সেলিং করাটা জরুরি। রোগীর সামনেই রোগীর পরিস্থিতি খারাপ—এ ধরনের আচরণ প্রকাশ করে রোগীকে যাতে ভয় পাইয়ে না দেন, সে আহ্বানও জানান চিকিৎসাসেবা সঙ্গে থাকার সবার প্রতি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এবং বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গুর কোনো উপসর্গ না থাকলে চিকিৎসক রোগীকে বাসায় পাঠানোর সময় লিখে দেবেন যে বারবার বমি হলে, খেতে না পারলে, ডায়রিয়া হলে, রক্তক্ষরণ হলে, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হলে, দুর্বল লাগলে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আর ডেঙ্গু রোগী যদি অন্তঃসত্ত্বা হন, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিলতা থাকে, স্থূলকায় হন তাহলে তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা বেশি থাকে। তাই ঝুঁকিতে যাঁরা আছেন তাঁদের জ্বর হলে ওই দিনই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে এবং সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। রোগীকে সব সময় পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকতে হবে।