গেন্ডারিয়ার শতবর্ষী পুকুর ভরাট ও নির্মাণকাজের ওপর স্থিতাবস্থা

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত শত বছরের পুরোনো পুকুরটি ভরাট-দখল ও স্থাপনাসহ অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

‘পুকুর দখল করে মার্কেট, কাউন্সিলরের অফিস’ শিরোনামে ৩ জুন একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত ওই পুকুরটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গতকাল রোববার মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ওই রিট করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, রুল দিয়ে হাইকোর্ট পুকুরটি ভরাট-দখল এবং সেখানে স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে পুকুরটি ভরাট ও সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে বিবাদীদের দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদনও দিতে বলা হয়েছে।

রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, রুলে ওই পুকুরটি দখল-ভরাট ও নির্মাণকাজ বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং আরএস ও সিএস রেকর্ড অনুসারে পুকুরটি রক্ষায় কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পুকুর দখল-ভরাট ও নির্মিত স্থাপনা অপসারণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। পরিবেশ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার জেলা প্রশাসক, শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, শ্যামপুরের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহানা আক্তার, সাবেক কাউন্সিলর সাইদুর রহমান শহীদসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।  

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ১৯৬৩ সালে ১৩ দশমিক ৫৭ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর মধ্যে দুই একরের একটি পুকুরও ছিল। এলাকাবাসী খাওয়ার পানি সংগ্রহ থেকে ধোয়ামোছাসহ নানা কাজে পুকুরের পানি ব্যবহার করতেন। পুকুর থেকে মাছও ধরতেন তাঁরা। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সেই পুকুরটি ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে প্রায় ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। চারপাশে ছোট ছোট মার্কেট, দোকান ও রিকশার গ্যারেজও গড়ে তোলা হয়েছে। দখল নিশ্চিত করতে পুকুরের একটি অংশ ভরাট করে নির্মিত দোতলা ভবন স্থানীয় ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহানা আক্তারের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে দখল চললেও উচ্ছেদ না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।