রাজধানীর বনানীতে সিটি করপোরেশনের জায়গায় বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের তৈরি করা বহুতল ভবন, বিশেষত ২১ থেকে ২৮ তলার বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল এভিয়েশন) স্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকে আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হলফনামা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। একই বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অবস্থান ব্যাখ্যা করে ৫ নভেম্বরের মধ্যে হলফনামা দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছেন, সিভিল এভিয়েশন ২০১ ফুট (২০ তলা) পর্যন্ত নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে, বলে একটি চিঠিতে দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হলো।
গত ৯ অক্টোবর হাইকোর্ট এক আদেশে ভবনটির ২১ থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত হিস্যা বণ্টনের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। ওই ভবন নির্মাণে সিভিল এভিয়েশনের ২০১ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত ছাড়পত্র দেওয়ার প্রসঙ্গটি সেদিন শুনানিতে আসে। তবে রিটে বিবাদী হিসেবে সিভিল এভিয়েশনকে পক্ষ করা হয়নি। এ অবস্থায় সিভিল এভিয়েশনের পক্ষভুক্ত করাসহ আবেদন দাখিলের জন্য রিট আবেদনকারী সময়ের আরজি জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এরপর ১০ অক্টোবর রিট আবেদনকারী সিভিল এভিয়েশনকে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত করাসহ দুটি আবেদন দাখিল করেন। অন্যদিকে এর প্রতিউত্তর দেওয়ার জন্য বোরাকের আইনজীবী সময়ের আরজি জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক নিজেই শুনানি করেন। বোরাকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন ও আইনজীবী মো. আবু তালেব শুনানিতে ছিলেন। উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মঈনুল ইসলাম। বনানী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানিতে সিভিল এভিয়েশনকে বিবাদী হিসেবে পক্ষ করা ও সম্পূরক রুল চেয়ে করা পৃথক দুটি আবেদন তুলে ধরেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। অন্যদিকে বোরাকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, তাদের তিনটি আবেদন রয়েছে। সিভিল এভিয়েশনকে পক্ষ করা হলে আপত্তি নেই বলে শুনানিতে জানান উত্তর সিটি করপোরেশেনের আইনজীবী ইমতিয়াজ মঈনুল ইসলাম। শুনানি নিয়ে আদালত সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত করার আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। সে সঙ্গে বানানী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদককে পক্ষভুক্ত করে নির্মিত বহুতল ওই বিষয়ে ৫ নভেম্বরের মধ্যে হলফনামা দাখিল করতে বলেছেন।
‘সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’ শিরোনামে গত ১ জুন প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১২ জুন হাইকোর্ট রুল দিয়ে বহুতল ওই ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে হিস্যা ও সুবিধাদি নিয়ে ওঠা ইস্যুগুলো বিধান মেনে দুই মাসের মধ্যে মীমাংসা করতে নির্দেশ দেন।
পরবর্তী সময়ে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট বহুতল ওই ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন ও বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত করতে এবং চুক্তি অনুসারে দুই পক্ষের হিস্যা–সুবিধাদি বুঝে নিতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনকে ৯ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশনের কিছু ইস্যু থাকায় হিস্যা নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা যায়নি বলে ৯ অক্টোবর উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী জানান। শুনানি নিয়ে সেদিন ভবনটির ২১ থেকে ২৮ তলা পর্যন্ত হিস্যা বণ্টনের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেওয়া হয়।