বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক জোবায়দা রহমানের সম্পত্তি আদালত কর্তৃক ক্রোকের আদেশ ফরমায়েশি ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, গণ-আন্দোলনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সরকার এ রায় দিয়েছে। এমনকি তারেক রহমান যেসব সম্পত্তির মালিক নন, সেসব সম্পত্তির গায়েবি মালিক বানিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান এবং এ জে মোহাম্মদ আলী উপস্থিত ছিলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ১/১১-এর জরুরি সরকার দেশকে বিরাজনৈতিকীকরণ অর্থে মাইনাস-২–সহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাদের ভিশন সফল করতে চেয়েছিল। সেই সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও শুধু তারেক রহমানের স্ত্রী ও জিয়া পরিবারের সদস্য হওয়ায় জোবায়দা রহমানকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আজ এমন এক সময়ে জোবায়দা রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের ফরমায়েশি আদেশ দেওয়া হলো, যখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিপ্লব ও গণ-আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলনে সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করেছে। বাধা, প্রতিবন্ধকতা, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা, বিপুল দমন-পীড়ন চালিয়েও আন্দোলন নস্যাৎ করতে পারছে না, জনস্রোত ঠেকাতে পারছে না। তাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে নেতা-কর্মী ও জনসাধারণের মনোবল বিনষ্ট করতেই সরকারের ইঙ্গিতে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির চলমান আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করতে প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক অভিযোগে মামলা ও রায় দিয়ে মিথ্যাচার করছে।
খন্দকার মোশাররফ আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যেন আজ বিএনপি দমন কমিশনে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, যেসব সম্পত্তির মালিক তারেক রহমান নন, কোনো দলিলে বা চুক্তিতে যেখানে তারেক রহমানের নাম, স্বাক্ষর বা সংশ্লিষ্টতা নেই, তাঁকে সেসব সম্পত্তির গায়েবি মালিক বানিয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এমনকি তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের কর পরিশোধকৃত সম্পদ নিয়েও কাল্পনিক অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকারের নির্মম প্রতিহিংসায় দেশ আজ পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। দেশে বিরাজমান সীমাহীন দুর্নীতির মহাতাণ্ডব দুদকের চোখে পড়ে না। ২০০০ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কলঙ্কের তিলক তৎকালীন আওয়ামী সরকার লাগিয়েছিল। বর্তমানে আওয়ামী সরকারের ছত্রচ্ছায়া ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুগত ব্যবসায়ী ও নেতা-কর্মীরা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলছেন; তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ দুদক নেয় না। জনগণকে বিভ্রান্ত ও আন্দোলন দমন করতে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আবারও চক্রান্ত শুরু করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আর এই চক্রান্তের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দুদক।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, তা অবান্তর, ভিত্তিহীন ও অমূলক। যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রতিহিংসামূলক ফরমায়েশি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সরকারের হীন এ কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে এবং সরকারকে এসব হীন ষড়যন্ত্র পরিত্যাগ করে সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, এসব মামলা, আদেশ, রায় দিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত বা জোবায়দা রহমানকে হেয়প্রতিপন্ন করতে পারবে না এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চলমান আন্দোলন বিভ্রান্ত বা নস্যাৎ করতে পারবে না। অবিলম্বে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে এ আদেশ ও রায় বাতিল করার দাবি জানান তিনি।