মগবাজারের ডাক্তার গলি থেকে জাতীয় বৃক্ষমেলায় আসা আবুল হোসেন একটি কাশ্মীরি কুল আর একটি আমের চারা কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। দুটি চারাই হাইব্রিড জাতের। টবে বা জিও ব্যাগে লাগানো যায়। ছোট গাছেই ফল ধরে। উপযুক্ত পরিচর্যা করলে এসব হাইব্রিড গাছেও অনেক বছর ফল পাওয়া যায়। আজ বুধবার দুপুরে মেলায় শেষ দিনে তাঁর সঙ্গে দেখা।
আবুল হোসেন জানান, আগেও দুই দিন বৃক্ষমেলায় গাছ কিনতে এসেছিলেন। আজ শেষ দিনে এসেছেন বিশেষ কিছু যদি পাওয়া যায় সে জন্য। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন। অবসরে গেছেন ছয় বছর হলো। মগবাজারে তাদের পৈতৃক বাড়ি। অবসরের পর বাড়ির ছাদজুড়ে ফল, সবজি আর ফুলের বাগান করেছেন। এখন এই বাগান নিয়েই তাঁর সময় কাটে। রাজধানীর ছাদবাগানি বা শৌখিন বৃক্ষানুরাগীদের জন্য এই বৃক্ষমেলা খুব প্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করলেন তিনি।
একসঙ্গে বহু নার্সারি বৃক্ষমেলায় অংশ নেয়। এখানে বিচিত্র ধরনের গাছ ও চারা পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে বীজ, ওষুধ, সারসহ নাগরিক পরিসরে কৃষিকাজে দরকারি সব রকমের সরঞ্জামই বৃক্ষমেলায় ওঠে। সেখান থেকে যাঁর যা প্রয়োজন কিনতে পারেন। পাশাপাশি নার্সারির অভিজ্ঞ লোকদের কাছ থেকে নানা রকমের পরামর্শও পাওয়া যায়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আগের বাণিজ্যমেলার মাঠে জাতীয় বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৯৯৪ সাল থেকে। মাঝখানে করোনা অতিমারির কারণে গত ২০২০ ও ২০২১ সালে বৃক্ষমেলা হয়নি। গত বছর থেকে আবার বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষমেলা হচ্ছে। এবারে বৃক্ষমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিক্রি আগের বারের চেয়ে বেড়েছে। তথ্যকেন্দ্রর দায়িত্বপ্রাপ্ত বন অধিদপ্তরের সামাজিক বন বিভাগে সমাজবিজ্ঞানী আমিনুল ইসলাম জানান, এবার প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ চারা বিক্রি হয়েছে। টাকার হিসাবে বিক্রির পরিমাণ ১৭ কোটির বেশি। গত ৫ জুন থেকে বন বিভাগের আয়োজনে ‘গাছ লাগিয়ে যত্ন করি/সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’ স্লোগান নিয়ে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছিল। এবার মেলার মাঝে পবিত্র ঈদুল আজহা পড়ায় ঈদের দিনে মেলা বন্ধ ছিল। এবার মেলায় ১২২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
আমিনুল ইসলাম বললেন, তাঁদের বিবেচনায় এবার বেশ সফল মেলা হয়েছে। বিক্রিও বেড়েছে। গত বছর বিক্রি হয়েছিল প্রায় ১৬ লাখ ৩০ হাজার ১১৮টি চারা। টাকার হিসাবে বিক্রি ছিল ১২ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ২৪২ টাকা। গত বছর ১০০ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। মেলা নিয়ে তাঁদের পর্যবেক্ষণ হলো, নগরে গাছ লাগানোর পরিসর কমছে। সে কারণে মানুষের গাছ লাগানোর সুযোগও কমে আসছে। যাঁদের নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, মূলত তাঁরাই ছাদবাগানের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে ছোট আকারের হাইব্রিড গাছ এবং অফিসে বা ঘরের জানালা, দরজার সামনে বা বারান্দায় রাখা যায় এমন শোভাবর্ধনকারী গাছের বিক্রি বাড়ছে।
নার্সারির মালিকদের সঙ্গে কথা বলেও একই রকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল। জান্নাত নার্সারির মালিক খন্দকার শরিফুল আলম, কিশোরগঞ্জ নার্সারি মালিক মো. রনি, হীরা নার্সারির মালিক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এবার শুরুর দিকে তাপপ্রবাহ বেশি ছিল। ফলে মেলার প্রথম প্রায় দিন দশেক ক্রেতাসমাগম কম ছিল। পরে নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়ার যেমন পরিবর্তন হয়েছে, মেলায় বৃক্ষানুরাগী ক্রেতাদের উপস্থিতিও বেড়েছে। বিশেষ করে ঈদের পর থেকে বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।
এবারই বৃক্ষমেলায় প্রথম অংশ নিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা মোংলার মুসুর ছাদবাগান নার্সারির স্বত্বাধিকারী মুরশিদা সুমী। তাঁদের স্টলে ছিল মূলত বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, ক্যাকটাস, সাকুলেন্টসহ শোভাবর্ধনকারী বড় গাছ ও চারা। তিনি জানান, ২০১৬ সাল থেকে ছাদবাগান শুরু করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে গত দুই বছর বাণিজ্যিক নার্সারি করেছেন। মূলত অনলাইনেই চারা বিক্রি করেন। এবার প্রথম জাতীয় বৃক্ষমেলায় অংশ নিয়ে অনেক আগ্রহী ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে। বিক্রিও ভালো হয়েছে।
ঢাকায় জাতীয় বৃক্ষমেলা শেষ হলেও বন বিভাগ সারা দেশে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষমেলার আয়োজন করবে আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত। এসব বৃক্ষমেলা ভূমিকা রাখবে দেশের সবুজায়নে।