জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে দেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন। সেই সময়ের প্রতিটি ঘটনাই গুরুত্বপূর্ণ, যা শুধু পেশাদার সাংবাদিক, আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায় নয়; ধরে রাখা আছে অনেক সাধারণ মানুষের কাছে। সেই ছবি, ভিডিও ইতিহাসের অংশ আর সেই মানুষেরা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সহযাত্রী। প্রথম আলোর আয়োজনে ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে এ কথা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। প্রথম আলোর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ছবি ও ভিডিও জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় এই ক্যাম্পেইন। দেশ–বিদেশের ১ হাজার ৩৯ জন পাঠক অংশ নিয়েছেন এতে।
বিজয়ীরা আজ প্রথম আলোর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। বরিশাল, রংপুর ও বরগুনা থেকে এসে বিজয়ীরা বর্ণনা করেছেন উত্তাল সময়ে ছবি অথবা ভিডিও চিত্র ধারণের অভিজ্ঞতা। কেউ ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য, কেউ তুলেছেন সচেতনভাবেই। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের ছবি-ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ ক্যাম্পেইনের প্রতিযোগিতায় ছবি ও ভিডিওর জন্য প্রথম পুরস্কার ৩০ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কার ২০ হাজার এবং তৃতীয় পুরস্কার ছিল ১০ হাজার টাকা করে। এ ছাড়া সেরা দশে থাকা সব বিজয়ী পেয়েছেন ৫ হাজার টাকা করে। তাঁদের হাতে সম্মাননা ও স্মারক তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় ছবির জন্য প্রথম হয়েছেন মো. আহছান উল্লাহ রিফাত (ঢাকা), দ্বিতীয় গালিব শাহরিয়ার (ঢাকা) এবং তৃতীয় হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল যুবায়ের (ঢাকা)। এ ছাড়া সেরা দশের বাকি সাতজন হলেন হাসানুর রহমান (পঞ্চগড়), মো. সাব্বির (ঢাকা), তৌহিদুজ্জামান খান (দুটি পুরস্কার, ঢাকা), মো. ওমর ফারুক (চট্টগ্রাম), সনি রামানি (ঢাকা) ও শাহরিয়ার আমিন (ঢাকা)।
ভিডিওর জন্য প্রথম হয়েছেন মো. সোহাগ মিয়া (বরগুনা), দ্বিতীয় মো. আহছান উল্লাহ (ঢাকা) এবং তৃতীয় হয়েছেন মো. ইব্রাহিম প্রধান (ঢাকা)। এ ছাড়া সেরা দশের বাকি সাতজন হলেন আলামিন হোসাইন (ঢাকা), রহিম সৈকত (চট্টগ্রাম), মারিয়া রহমান (বরিশাল), রাকিব হাসান (বগুড়া), মো. ইমরান হোসেন ইমু (চট্টগ্রাম), আসাদুজ্জামান আরমান (রংপুর) ও মো. মানজুর হোছাঈন (ঢাকা)।
বিজয়ীরা জানান, তাঁরা প্রতিযোগিতার জন্য নয়, সময়টাকে ধরে রাখতেই অগ্নিগর্ভ মুহূর্তেও পিছু না হটে তুলেছেন ছাত্র–জনতার আন্দোলনের ছবি, ভিডিও।
আলোচনা পর্বে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা করার জন্য প্রথম আলো সব সরকারের সময়েই নানা রকম চাপে থাকে। এর মধ্য দিয়েই প্রথম আলো ২৫ বছরের বেশি অতিক্রম করেছে।
সাজ্জাদ শরিফ আরও বলেন, ছাত্র–জনতার আন্দোলনে দেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া এত বড় ঘটনা আর বাংলাদেশে কখনো ঘটেনি।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, প্রথম আলোর প্রতি এত মানুষের আস্থার কারণ—প্রতিটি খবর বারবার যাচাইয়ের পর প্রকাশ করা হয়।
এ সময় বিজয়ীদের উদ্দেশে আনিসুল হক বলেন, ‘মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই ঝুঁকির মধ্যেও আপনারা সেই সময়ে ছবি তুলেছেন, ভিডিও করেছেন। আপনাদের দেখার চোখ আছে, শিল্পসত্তা আছে।’
ছবি ও ভিডিও নির্বাচনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে প্রথম আলোর উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া বলেন, ঘটনাস্থল, দৃশ্যধারণকারীর অবস্থানসহ সম্পূর্ণ ঘটনার কতখানি অংশ আছে, এমন অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়েছে। কেউ কেউ প্রাণের সংশয় নিয়েও ঘটনাস্থলে থেকেছেন।
প্রথম আলোর ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ ক্যাম্পেইনে স্থিরচিত্র নির্বাচনে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ ছিলেন চারজন বিচারক।
আলোকচিত্রী সুমন ইউসুফ প্রথম হওয়া ছবিটি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, এটি আধুনিক ছবি। যেখানে বিপুল শক্তির সামনে সামান্য শক্তি নিয়েও অটল দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের শক্তির গল্প আছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর হেড অব মার্কেটিং আজওয়াজ খান, চিফ ডিজিটাল বিজনেস অফিসার জাবেদ সুলতান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ক্যামেরায় বিদ্রোহ ক্যাম্পেইনের সমন্বয়ক ও প্রথম আলোর সিনিয়র কনটেন্ট ম্যানেজার খায়রুল বাবুই।