দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত নতুন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনের আহ্বান টিআইবির

রাজনৈতিক বিবেচনা ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসে দ্রুত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন কমিশন নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুদকে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দক্ষ ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। যাতে করে দুদক স্বার্থ ও দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে দুর্নীতি দমন করতে পারবে, আবার মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ আহ্বান জানায়। গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের পর সংগঠনটি এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চলমান রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুদক অন্যতম। স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন উপযোগী সুপারিশ তৈরি করাই দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান কাজ। এমন প্রেক্ষিতে সরকারের প্রত্যাশা অনুযায়ী কমিশনের পদত্যাগের ফলে সরকার অবিলম্বে নতুন কমিশন গঠনের দায়িত্ব নিয়েছে।’

‘ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী সরকারের শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধানের কাজ চলমান রয়েছে। এমন একটি সময়ে শীর্ষ পর্যায়ের শূন্যতা দুদকের তদন্তসহ সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, নতুন কমিশন গঠনের আগপর্যন্ত নতুন করে কারও বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু ও তদন্ত বা মামলা করার সুযোগ থাকবে না। ফলে দ্রুত নতুন কমিশন গঠনের মাধ্যমে এ শূন্যতা পূরণ করা জরুরি। তা না হলে রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দুদকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সংস্থাটিকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক স্বার্থরক্ষায় ব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।...রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়ার কারণে কমিশন কখনোই প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ’

টিআইবি মনে করে, ‘রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া কমিশনারেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা করণীয় নির্ধারণেও নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে বড় আকারের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের তথ্য ও সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তদন্তের উদ্যোগ না নেওয়া, আবার দায়সারা উদ্যোগ নিলেও পরবর্তী সময়ে অভিযুক্তকে দায়মুক্তি প্রদানের নজিরও তৈরি করেছে দুদক। অন্যদিকে ক্ষমতার বাইরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা অন্য কোনো কারণে বিরাগভাজন মহলের জন্য হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিয়েছে দুদক। ফলে বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি দমনের স্থলে দুর্নীতি সহায়ক ও সুরক্ষাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অবস্থায়ই দলীয় রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তিকে বিবেচনা করা যাবে না। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমনে দক্ষ-উপযুক্ত, ব্যক্তিজীবনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, আমলাতান্ত্রিক স্বার্থমুক্ত এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে নজিরবিহীন ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্ট জনপ্রত্যাশা যেমন আরও একবার ধূলিসাৎ হবে, তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেছেন।