সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, চা-শ্রমিকসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিকেরা তাঁদের কষ্টের কথা শোনাতে চাইছেন। কিন্তু এখন শ্রমিকেরা তাঁদের কথা শোনানোর সুযোগও পাচ্ছেন না।
আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে চা-শ্রমিকদের নিয়ে দুটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে এ কথা বলেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর।
যে দুটি বইয়ের আজ প্রকাশনা উৎসব ছিল সেগুলো হলো ‘চা শ্রমিকের কথা’ ও ‘চা শ্রমিকের মজুরি: মালিকের লাভ, শ্রমিকের লোকসান’।
‘চা শ্রমিকের কথা’ বইটি মূলত চা-শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থা এবং বাংলাদেশের চা-শিল্প নিয়ে। অন্যটি চা-শ্রমিকের মজুরি এবং ন্যায্য মজুরির দাবিতে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে চা-শ্রমিকদের ১৯ দিনের নজিরবিহীন ধর্মঘট নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট এবং নানা তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ।
প্রকাশনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজক সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড), ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।
হোসেন জিল্লুর রহমান আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন। সম্মানিত অতিথি ও আলোচক হিসেবে ছিলেন চা-শ্রমিকদের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী।
‘চা শ্রমিকের মজুরি: মালিকের লাভ, শ্রমিকের লোকসান’ বইটিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের চা শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। বাংলাদেশের অন্য কোথাও চা শ্রমিকের মজুরি থেকে কম মজুরি আছে বলে জানা যায় না। ২০১৯-২০২০ সালে তাদের দৈনিক মজুরি ছিল ১২০ টাকা, তার আগের দুই বছর ছিল ১০২ টাকা (এ মজুরি “এ” শ্রেণির বাগানের জন্য: “বি” ও “সি” শ্রেণির বাগানে মজুরি আরও এক-দুই টাকা কম)। আর ২০০৮ সালে একজন চা শ্রমিকের মজুরি ছিল ৩২ টাকা পঞ্চাশ পয়সা।’
চা-শ্রমিকদের নানামুখী বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের চা-শ্রমিকেরা তাঁদের কষ্ট বহন করে আসছেন শতাব্দীকাল ধরে। তাঁরা যে প্রশ্ন তুলছেন, তা ন্যায্যতার প্রশ্ন, অন্যায্য কিছুই নয়।
হোসেন জিল্লুর বলেন, নানা ধরনের অঙ্কের মারপ্যাঁচে দেশের চা-শ্রমিকসহ বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের ফেলে দেওয়া হয়। এখন শ্রমিকদের তাঁদের দাবির আন্দোলনের পাশাপাশি অঙ্কের যুদ্ধও করে যেতে হবে।
দেশের চা-বাগানগুলোতে কাজ করেন ১ লাখ ৪০ হাজার ১৮৪ শ্রমিক। সেড ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৫৬টি চা-বাগানে গবেষণা চালিয়ে এসব বাগানে ৮০টির মতো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পেয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ২৩টি সরকারের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তালিকায় স্থান পেয়েছে।
অনুষ্ঠানের সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের অনেক কম মজুরি দিয়ে চা-বাগানে ধরে রাখার কৌশল এখনো চা-বাগানের মালিকেরা ব্যবহার করছেন। তবে মাঝেমধ্যে চা-শ্রমিকেরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেন এবং কিছু আন্দোলন, সংগ্রাম, ধর্মঘট করার চেষ্টা করেন। এযাবৎকালে বাংলাদেশে চা-শ্রমিকেরা যেসব প্রতিবাদ-সমাবেশ ও ধর্মঘট করেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ধর্মঘট আমরা দেখলাম ২০২২ সালের ৯ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত।’
বই দুটির গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফিলিপ গাইন বলেন, চা-শ্রমিকের প্রতি সুবিচার করতে শ্রম আইনের বাস্তবায়ন এবং শ্রম আইনে চা-শ্রমিকদের প্রতি যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা দূর করতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দায়িত্ব ও মালিকের দায়বদ্ধতা তুলে ধরা হয়েছে। বইগুলো চা-শ্রমিক ও চা-জনগোষ্ঠীর সার্বিক অবস্থা বুঝতে সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের অধ্যাপক এম এম আকাশ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, চা-শ্রমিকনেতা তপন দত্ত, চা-শ্রমিক শ্রীমতি বাউরি প্রমুখ।