নর্দমা নির্মাণ ও সড়ক সংস্কার কাজের কারণে এলাকায় প্রধান সড়কসহ ভেতরের অনেক সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। একসঙ্গে একাধিক সড়কে এমন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বাসিন্দারা অনেকটা গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। হেঁটে চলাচলের জায়গাও থাকছে না। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, রোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে নিজেদের দুর্ভোগ নিয়ে এসব অভিযোগ করেছেন দক্ষিণখান ও উত্তরখান এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা এসব সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি দিতে মেয়রকে অনুরোধ জানান।
আজ সকালে দক্ষিণখান এলাকায় চলমান উন্নয়নকাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেখানে উন্নয়নকাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও অগ্রগতি নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে একটি সভা করেন মেয়র। ওই সভাতেই উপস্থিতি এলাকার বাসিন্দারা মেয়রের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
ঢাকা উত্তর সিটিতে যুক্ত নতুন ১৮টি ওয়ার্ড এলাকায় সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলছে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে শুরু হলেও এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ৬ মার্চ। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে।
সভায় মেয়রের উদ্দেশে দক্ষিণখানের এক নারী বাসিন্দা বলেন, ‘দক্ষিণখানের প্রধান সড়ক কসাইবাড়ি রোডে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মানুষ চলাচল করত কাওলার রাস্তায়। কিন্তু কাওলার প্রাইমারি স্কুলে খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। এ কারণে এখন আমরা গৃহবন্দীর মতো হয়ে গেছি।’ ওই নারী আরও বলেন, যেসব জায়গায় পাইপ বসানোর কাজ হয়েছে, ওই সব জায়গায় যদি এখন বালু ভরাট করে দিলে মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।
সভায় মেয়রের কাছে দক্ষিণখানের আরেক বাসিন্দা জানতে চান, শুনতে পাচ্ছি সড়কটি (দক্ষিণখানের প্রধান সড়ক) ৭২, ৬০, ৮০ কিংবা ১০০ ফুটের হবে। আসলে কত ফুট হবে সেটা নিয়ে পরিষ্কার করলে ভালো হয়। কারণ, অনেকের জমি রাস্তার পাশে। ভবিষ্যতে যেখানে একটি দোকান বা বাড়ি করার পরিকল্পনা রয়েছে; কিন্তু কিছুই করা যাচ্ছে না।
ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, ‘সব রাস্তায় একসঙ্গে কাজ ধরার উদ্দেশ্য তাড়াতাড়ি দুর্ভোগ লাঘব করা। কাজ একটু স্লো হচ্ছে। কারণ, বর্ষার মধ্যে কাজ তাড়াহুড়া করে গেলে কোয়ালিটি ভালো হবে না। পরের বর্ষায় ধুয়ে চলে যাবে।’
এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা মেয়রের উদ্দেশে বলেন, অনেক সড়কে কাজ চলমান থাকলেও দক্ষিণখানের মুক্তিযোদ্ধা সড়কে এখনো কাজ শুরু হয়নি। এ সড়কে কাজ আদৌ হবে কী না, তিনি জানতে চান। তিনি আরও বলেন, কসাইবাড়ি সড়কে অনেক যানজট হয়। এর মধ্যে ট্রেনের চার লাইনের কাজ চলছে। তখন অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে। এর সমাধানের জন্য কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, জানতে চান।
এলাকাবাসীর সমস্যা ও অভিযোগ শোনার পরে মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যে সমস্যা হচ্ছে, তা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরতেও অনুরোধ করেন তিনি।
প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আপনারা অনেক ধৈর্য ধরেছেন। আরেকটু ধৈর্য ধরেন। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নর্দমা ও রাস্তাসহ সমস্যা সমাধান হবে।’ টেকসই কাজ করতে গেলে কিছুটা সময় দিতেই হবে বলেও জানান মেয়র।
কাজে ধীরগতির বিষয়ে মেয়র বলেন, ২০২২ সালে প্রকল্পের কাজ শুরুর উদ্বোধন করা হয়। পরে করোনার কারণে কাজগুলো করা সম্ভব হয়নি। ওই দুটি বছর তিনিসহ কাউন্সিলররা এলাকাতেই ছিলেন। কিন্তু উন্নয়নমূলক কাজ ধীরে ধীরে এগিয়েছে। দীর্ঘ ৫০ বছরের সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। এতে আগামী ৫০ বছর এলাকাবাসী সুন্দরভাবে থাকতে পারবেন।
শেষে মেয়র জানান, আগামী দুদিনও (বুধ ও বৃহস্পতিবার) দক্ষিণখান-উত্তরখানের বিভিন্ন এলাকায় তিনি যাবেন এবং সেখান থেকেই দাপ্তরিক কাজ করবেন। এ সময় জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি জনগণের কাছে তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জবাবদিহি করবেন বলেও জানান।
বেলা পৌনে দুইটার দিকে সভা শেষ হয়। পরে সভাস্থল থেকে ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরীসহ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে দক্ষিণখানের যে প্রধান সড়কে কাজ চলছে তা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।