ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হবে বেলা দুইটার দিকে। মিরপুরের প্যারিস রোড এলাকা থেকে এ কাজের উদ্বোধন করবেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম।
কিন্তু এরও প্রায় আট ঘণ্টা আগেই, অর্থাৎ সকাল ৬টা থেকেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছেন বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের কর্মী ইকবাল হোসেন। যদিও ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের সকাল আটটা থেকে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছিল।
ইকবাল হোসেন বলছিলেন, ‘কাজ আমাদেরই করতে হবে। সেইটা আগেই করি, আর পরেই করি। তাই আগেভাগেই শুরু করে দিয়েছি, যাতে আগে শেষ করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কষ্ট করে ঈদের দিনও কাজ করি। শুধু একটাই চাওয়া, আমাদের ওয়ার্ড থেকে ময়লা (কোরবানির বর্জ্য) নিয়ে যাতে কোনো কমপ্লেইন (অভিযোগ) না যায়।’
ইকবাল হোসেনের সঙ্গে ঈদের দিন আজ সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং এলাকায় কথা হয়। তিনি নবোদয় হাউজিংয়ের ব্লক-এ এলাকা থেকে কোরবানির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করছেন বলে জানালেন। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি সেচযন্ত্র–চালিত বাহন নছিমন থেকে বর্জ্য নামাচ্ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে আরও প্রায় ১০ কর্মী ভ্যান কিংবা নছিমন থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ করছিলেন। এই কর্মীরা জানান, সকালে মূলত কোরবানির পশুকে খাওয়ানোর খড়, ঘাস, পাতা এবং গরুর গোবরসহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করেন। এর সঙ্গে প্রতিদিনের যে কাজ, গৃহস্থালির বর্জ্য সেটাও সংগ্রহ করতে হয়। কোরবানির পশু জবাইয়ের পর অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়।
সেখানে ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের আরেকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. জাভেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সকালে এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের পরেই আটটার দিকে কাজ শুরু করেছেন বলে জানান। জাভেদ মোহাম্মদিয়া হাউজিং এলাকার ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সড়ক থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন।
ভ্যান সার্ভিসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে ২১ বছর ধরে কোরবানির ঈদে এভাবে কাজ করছেন বলে জানিয়ে জাভেদ বলেন, ‘একটা সময় ছিল আমরা বাসাবাড়ি কিংবা অলিগলি থেকে বর্জ্য আনার পরও সেগুলো রাস্তায় পচত। কারণ সিটি করপোরেশনের জনবল কম ছিল। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। কয়েক বছর ধরে রাস্তায় আর বর্জ্য পচছে না।’
ঢাকা উত্তর সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সূত্রে, এ বছর মেয়র ছয় ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এ কাজে মাঠে আছেন ৫৪টি ওয়ার্ডে বাসাবাড়ি থেকে গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ করা প্রায় ৪ হাজার ২০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাঁরা মূলত বিভিন্ন এলাকা থেকে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে বর্জ্যগুলো নিয়ে আসার কাজ করবেন। এই কর্মীরা সিটি করপোরেশনের বেতনভুক্ত নন। ঈদের দিন তাঁদের জন্য আলাদা কোনো পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের একাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ঈদের সময় তাঁরা পরিবার থেকে দূরে থেকে কোরবানির বর্জ্য সরানোর কাজ করেন। কাজের চাপ এত বেশি থাকে যে তাঁদের অনেকের বাসায় গিয়ে একটু আরাম করে খাওয়ার সুযোগটাও হয় না। সিটি করপোরেশন যেহেতু কোনো পারিশ্রমিক দেয় না, তাই ঈদের দিন অন্তত তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করলে তাঁরা কাজে উৎসাহ পেতেন।
ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদী সুপার ক্লিনার্স প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক সিরাজ সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে ভ্যান সার্ভিস দিচ্ছি। তখন থেকে প্রতিটি কোরবানির ঈদ মানেই দিন কাটে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে। কাজ শেষের আগে বাড়ি ফেরার সুযোগ নেই।’ তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১৬টি ভ্যানে ৪০ কর্মী কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
ভ্যান সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি সংগৃহীত বর্জ্য ল্যান্ডফিলে নেওয়ার কাজ করেন সিটি করপোরেশনের ডাম্প ট্রাক, কম্পেক্টর ট্রাক ও খোলা ট্রাকের চালকেরা। আর বর্জ্যগুলো ট্রাকে ওঠানোর কাজ করেন বুলডোজার, পে-লোডারের মতো বিভিন্ন ভারী যানযন্ত্রের চালকেরা।
আজ বেলা ১১টার দিকে কথা হয় খোলা ট্রাকের চালক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিনের আনন্দ বলতে সকালে নামাজ পড়া আর সবার সঙ্গে নামাজের পর কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। এরপর সারা দিন ময়লা-আবর্জনার মধ্যে ডুবে থাকতে হয়।