‘রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
‘রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাবিতে রোকেয়া দিবস উদ্‌যাপন

বাধা মোকাবিলা করে নারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে

বেগম রোকেয়া এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে অজ্ঞতা, বৈষম্য ও নিপীড়ন থাকবে না। কিন্তু এখনো বিভিন্ন কুসংস্কার ও অবরোধের বেড়াজালে নারীরা আটকে আছেন। মনে রাখতে হবে, অনেক বাধা আসবে, সব বাধা মোকাবিলা করে নারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ‘রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৪-এর কর্মসূচির অংশ হিসেবে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকার নেত্রী শীপা হাফিজা বলেন, রোকেয়া এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে সমাজে অজ্ঞতা থাকবে না, বৈষম্য ও নিপীড়ন থাকবে না। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সব শ্রেণির নারী-পুরুষ উভয়কে কাজ করতে হবে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখায় না, এ শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, রোকেয়া শুধু নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে নয়, বরং নারী আন্দোলনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নারীর অগ্রযাত্রাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। লেখালেখির মাধ্যমে তিনি এটা করেছেন। শুধু নারী আন্দোলন নয়, সমাজসংস্কারক হিসেবে দেশের অগ্রগতির লক্ষ্যে নারী-পুরুষকে মানসিক দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের চন্দন লাহিড়ী বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে রংপুরে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের কথা আসাটা অত্যন্ত দুঃখের। ১০০ বছরের বেশি সময় আগে নারীমুক্তির লক্ষ্যে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার অর্জন ও অগ্রগতি কতখানি হয়েছে, আমাদের তা ভেবে দেখতে হবে।’

ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার বলেন, ‘আমরা এগিয়েছি বটে, কিন্তু মুক্তি এখনো আসেনি। আমরা এখনো অবরোধবাসিনী, এখনো বিভিন্ন কুসংস্কার ও অবরোধের বেড়াজালে নারীরা আটকে আছে। অনেক বাধা আসবে, সেই বাধাকে মোকাবিলা করে নারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘সম্প্রতি রোকেয়ার প্রতি অবমাননার ঘটনা খেয়াল করলে দেখা যায়, পুরুষতন্ত্র শুধু পুরুষেরা নয়, ক্ষেত্রবিশেষে নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা লালন করেন।’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘রোকেয়া নারী-পুরুষের বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছিলেন, সেটার উত্তরসূরি হিসেবে সেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাব। ১৪৫ বছর আগে নারী মানুষ হওয়ার জন্য আন্দোলন করত। এখন নারীকে মর্যাদা পাওয়ার জন্য ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সকল জায়গার নারীদের সমান সুযোগ দিতে হবে, তাদের সুযোগ তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

ফওজিয়া মোসলেম রোকেয়াকে নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার বিষয়ে আরও উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন সমাপিকা হালদার। আলোচনা শেষে নৃত্য পরিবেশনা করেন মুক্তা ঠাকুর, মনুসংহিতা এবং সেতু ও তাঁর দল।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। এই দিনেই ১৯৩২ সালে তিনি মারা যান।