প্রচণ্ড গরমে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন বাইরে কাজ করতে বের হওয়া মানুষেরা। গগনবাবু সড়ক, খুলনা, ২২ এপ্রিল
প্রচণ্ড গরমে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন বাইরে কাজ করতে বের হওয়া মানুষেরা। গগনবাবু সড়ক, খুলনা, ২২ এপ্রিল

গরমে শ্রমজীবীদের দুর্ভোগ

রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ের কাছে ফুটপাতে তরমুজ, আনারস ও পেঁপে কেটে বিক্রি করেন হুমায়ুন কবির। সোমবার সকাল ১০টায় তিনি বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু তাঁর দোকানের ওপর যে ছাতা, তা তাঁকে রোদ থেকে রক্ষা করতে পারছিল না। রোদ–গরমে তিনি ঘামতে থাকেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘একপর্যায়ে শরীর দুর্বল লাগছিল। ভালো লাগছিল না। তাই দুপুরে মসজিদে গিয়ে দুই ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। রোদ কমে যাওয়ার পর আবার দোকানে এসেছি।’

বেশ কয়েক দিন ধরে দেশজুড়ে চলা তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন এমন বিরূপ আবহাওয়ায়ও হুমায়ুন কবিরের মতো যাঁদের কাজের জন্য বাইরে থাকতে হচ্ছে।

তীব্র তাপপ্রবাহে অসুস্থতা ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ধরনের অসুস্থতায় চিকিৎসার জন্য নির্দেশিকা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশিকার বলা হয়েছে, দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার নিরাপদ পানি পান করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর পানীয় ও খাবার খাওয়া যাবে না। প্রয়োজনে দিনে একাধিকবার গোসল করতে হবে। গরমের সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। গাঢ় রঙিন পোশাক পরা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে হবে। কারও যদি অন্য কোনো অসুখ থাকে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন নির্দেশনা মানা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য কঠিন। যেমন এমন তীব্র রোদ ও গরমের মধ্যে ছাতা ছাড়াই সোমবার সারা দিন পুরানা পল্টন মোড়ে ফুচকা বিক্রি করেছেন মো. আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি। হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক–স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। চাকরি না পেয়ে তিনি ফুচকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এই ঈদুল ফিতরের আগের দিন তিনি ঢাকায় আসেন। আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বসে থাকলে তো সংসার চলে না, তাই রোদের মধ্যেই ফুচকা বিক্রি করছি। আর যে বেচাকেনা, তাতে ছাতা কেনার অবস্থাও নাই।’

গরমে মানুষের কষ্টের চিত্র যেন সর্বত্র। পল্টন মোড়ের কাছেই বোতলের পানি দিয়ে হাত, পা, মুখ ধুয়ে নিচ্ছিলেন রিকশাচালক মো. ইয়াকুব আলী। তারপর পানি খেয়ে বোতল রিকশার আসনের নিচে রেখে ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, একটা করে খ্যাপ মারার পর পানি খাওয়া লাগে। নইলে শরীর চলে না। আর শরীরটা পানি দিয়ে মুছতে পারলে একটু আরাম লাগে।

যাত্রীর চাপ থাকলেও তাতে লাভ হচ্ছে না বলেও জানান ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, ‘যাত্রীর চাপ আছে, কিন্তু গরমের জন্য চালাতে পারি না। অল্প খ্যাপ মারি। যা চাই তা–ই পাই। এই গরমে মানুষ বেশি দরাদরি করে না।’

গরমে শরীর সুস্থ রাখতে পানীয়র বিকল্প নেই। ফলে ডাব, শরবত, জুসের দোকানগুলোয় বেচাকেনাও ভালো। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই শর বেশি ডাব বিক্রি করেছেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ডাব বিক্রেতা মো. নুর নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ গরমের জন্য অনেক ডাব খাচ্ছে। আমি নিজেও গরমে টিকতে না পেরে দুইটা ডাব খেয়েছি।’