দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর ২০১৩ সালে সিরাজুন মুনিরের একটি পা কেটে ফেলতে হয়। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি অটোরিকশা চালিয়ে স্ত্রী, সন্তান, মা এবং মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন বড় ভাইয়ের খরচ বহন করছিলেন। তবে গত ২৩ অক্টোবর একমাত্র সম্বল এ অটোরিকশাটি চুরি হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ করেছেন তিনি।
রাজধানীর বাসাবো এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন ২৮ বছর বয়সী সিরাজুন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ অক্টোবর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের এক অফিসে যান। অফিসে ঢোকার আগে অটোরিকশাটি বাইরে রেখে যান। বের হয়ে দেখেন অটোরিকশাটি চুরি হয়ে গেছে। এরপর নিজ উদ্যোগে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেখানে দেখা যায় তিনজন মিলে অটোরিকশাটি চুরি করেছেন।
সিরাজুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর আমাকে এসআই মুকিদুল হাসান নামের একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কয়েক দিন থানায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। পাইনি। অবশেষে বুধবার থানায় গিয়ে তাঁকে পাই। সিসিটিভির ফুটেজ দিয়ে এসেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মুকিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে একজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদপুর থানা যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, তা তিনি দেখবেন।
দুর্ঘটনায় পা হারানোর পর সিরাজুন একটি কৃত্রিম পা লাগিয়েছেন। তবে পায়ের মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়ায় ওই কৃত্রিম পা এখন আর সেভাবে কাজ করছে না। কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ পারেন উল্লেখ করে সিরাজুন বলেন, বিভিন্ন সময় কম্পিউটার–সংক্রান্ত কাজের অর্ডার পান। আর সংসার চালানোর জন্য অটোরিকশাটি চালাতেন। বলতে গেলে এটিই ছিল তাঁর সম্বল।
সিরাজুন জানালেন, ১৫ বছর ধরে বড় ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি সেভাবে কোনো কাজ করতে পারেন না। বাবা মারা গেছেন। এক বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন। অটোরিকশাটি তিনি ভাড়ায় চালাতেন। প্রতিদিন মালিককে ৫০০ টাকা দিতে হতো। এর বাইরে যা হাতে থাকত, তা দিয়ে চলে যেত। এখন তো সেই আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
সিরাজুন বললেন, ‘সব মিলিয়ে আমার অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। অটোরিকশাটি চুরি হওয়ার পর থেকে বলতে গেলে বাসার বাজার করা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।’