অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির মামলা থেকে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামের অব্যাহতি পাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট আরও দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সংগঠন দুটি হলো নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড ও নিউইয়র্কভিত্তিক দ্য কোয়ালিশন ফর ওমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইএজে)। সংগঠন দুটি নিজেদের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্টে রোজিনা ইসলামকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট দিয়েছে।
ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডর পোস্টে বলা হয়, ‘তিন বছর তিন মাস পর আমরা শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক ও ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড বিজয়ী রোজিনা ইসলামের অব্যাহতি উদ্যাপন করতে পারছি। সাংবাদিকতা ও সত্যের প্রতি অব্যাহতভাবে তিনি যে গভীর উদ্যম ও দায়বদ্ধতা দেখিয়েছেন, আমরা সেটার প্রশংসা করি।’
সেরা অদম্য সাংবাদিক বা মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট শ্রেণিতে রোজিনা ইসলামকে ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ দেওয়া হয়। মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য লড়াই করা সাংবাদিকদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
সিএফডব্লিউআইএজের পোস্টে বলা হয়, ‘রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীন তাঁর বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেগুলো থেকে অব্যাহতি পাওয়াকে আমরা উদ্যাপন করছি। গত তিন বছরে একটি নির্মম কর্তৃপক্ষের শাসনামলে তিনি সাহস ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। এটা রোজিনা ইসলামের জন্য ও বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য একটি বিজয়।’
এর আগে ১৫ আগস্ট মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় রোজিনা ইসলামকে স্বাগত জানিয়েছিল বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন নিউইয়র্কভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।
২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। একই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এক সপ্তাহের মাথায় ওই বছরের ২৩ মে তিনি জামিনে ছাড়া পান। এর পর থেকে তিনি আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।
এ মামলা থেকে গত ১৪ আগস্ট অব্যাহতি পান রোজিনা ইসলাম। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাঁকে অব্যাহতি দেন। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক নূর নবী সরকার মামলা থেকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হলো।
এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবিও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। পরে ডিবির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তখন আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
সাংবাদিকতার মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার জন্য ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর রোজিনা ইসলামকে অ্যান্টিকরাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড দেয়।