চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) বুশরা আফরিনের পরামর্শে চলমান প্রচণ্ড দাবদাহে জনগণকে স্বস্তি দিতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, দুটি স্প্রে ক্যানন যন্ত্রের মাধ্যমে সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের স্বস্তির জন্য কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডিএনসিসির পানি ছিটানো কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র এসব কথা বলেন। শহরকে ঠান্ডা রাখতে ও বায়ুদূষণ রোধে এই কাজ চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি দুটি স্প্রে ক্যানন, ১০টি ওটার বাউজার গাড়িতে করে বিভিন্ন সড়কে পানি ছিটানোর কাজ করছে৷ পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ড এলাকায় বিনা মূল্যে খাবার পানির ব্যবস্থা করেছে।
আজ সকালে মেয়র আতিকুল ইসলাম আগারগাঁওয়ের সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সরণিতে গিয়ে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহের জন্য রাখা বিশেষ ভ্যান পরিদর্শন করেন এবং নিজে ট্যাপ ছেড়ে পানি পান করেন। পরে স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টির মতো পানি ছিটানো শুরু হলে মেয়র নিজে উচ্ছ্বসিত শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ছিটানো ওই পানিতে ভিজেন।
এর আগে মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, দুটি স্প্রে ক্যানন কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করে এগুলো প্রধান সড়কে পানি ছিটাবে। এগুলো বেশ বড় হওয়ায় গলির সড়কে প্রবেশ করতে পারবে না৷ গলির সড়কে পানি ছিটানোর জন্য ১০টি ওয়াটার বাউজার কাজ করবে। এগুলোর মাধ্যমে সড়ক ভিজিয়ে ঠান্ডা রাখা হবে। পার্কে থাকা গাছপালার জন্য স্প্রে ক্যাননের মাধ্যমে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মেয়র।
মেয়র বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি বিশেষ ভ্যানগাড়ি (৫০০ লিটার পানির ট্যাংকসংবলিত) পথচারীদের পানি পান করানোর জন্য নামানো হয়েছে। ভ্যানগুলো বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি নিয়ে ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। এই ভ্যানগুলো ছোট আকারে করা হয়েছে, যেন শহরের অলিগলিতে প্রবেশ করতে পারে। পথচারী ও শ্রমজীবী মানুষ যেন পানি খেতে পারে।
এ সময় মেয়র নগরবাসীর প্রতি কিছু আহ্বান জানান। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন এলাকার দোকানদার, ব্যবসায়ী ও মালিক সমিতির নেতাদের অনুরোধ প্রতিটি দোকান, শপিং মল, মার্কেটের সামনে পানি খাওয়ার জন্য একটি ড্রামের ব্যবস্থা করতে বলেন। যাতে যে কেউ পানি পান করার সুযোগ পায়।
গত বছর ৮০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, এ বছর আরও ১ লাখ ২০ হাজার গাছ লাগানো হবে৷ গাছগুলো লালন–পালনের জন্য নগরবাসীর সহায়তা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন পরিচর্যার পাশাপাশি নগরবাসী যাঁর যাঁর বাড়ির সামনে, দোকানের সামনে যে গাছগুলো আছে, সেগুলোর যত্ন নিতে হবে। শেষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাইকে যাঁর যাঁর বাড়ি, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশপাশ পরিষ্কার রাখার অনুরোধ করেন, যাতে মশার লার্ভা জন্ম নিতে না পারে।
চিফ হিট অফিসারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার সিটি করপোরেশনকে পরামর্শ দিচ্ছেন। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। তিনি তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন না। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু কাজগুলো আসলে সিটি করপোরেশনকে, সবাইকে করতে হবে।’
চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনকে নিয়োগ ও বেতন–ভাতা প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমি দেখছি কয়েক দিন ধরে চিফ হিট অফিসারকে নিয়ে অনেকে বলছেন সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন, আসলে এটা সঠিক নয়। সিটি করপোরেশন থেকে তিনি একটি টাকাও পান না। এমনকি সিটি করপোরেশনে তাঁর কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই। তাঁর কোনো চেয়ারও কিন্তু নেই।’
পানি ছিটানো কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় অন্যদের সঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।