বিরোধী দলগুলোর হরতাল-অবরোধের মধ্যে ট্রেনে নাশকতার কয়েকটি ঘটনার পর মেট্রোরেলের (মাস র্যাপিড ট্রানজিট-এমআরটি) নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে পুলিশ। মেট্রোরেলের স্টেশনে ঢোকার প্রবেশপথগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে পর্যবেক্ষণ, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি, স্টেশনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠার পর খোলা জায়গায় (কনকর্স হল) আর্চওয়ে, ট্রেনে ওঠার আগে লাগেজ স্ক্যানার ও বিস্ফোরক জাতীয় বস্তু শনাক্তে যন্ত্র রাখতে বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খ. মহিদ উদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এবং ৪ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হয়। মানুষের মাঝে মেট্রোরেল আশার সঞ্চার করেছে। এটি তাঁদের ভালো লাগার জায়গাও তৈরি করে নিয়েছে। মেট্রোরেল মানুষের যাতায়াত সহজ করেছে, গন্তব্যে যেতে সময়ও লাগছে কম। শুরুর দিকে প্রায় সাড়ে ৪০০ ডিএমপির সদস্য মেট্রোরেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এরপর মেট্রোরেলের জন্য বিশেষায়িত মেট্রোরেল পুলিশ বা এমআরটি পুলিশ গঠন করা হয়। এই ইউনিটে একজন ডিআইজির (উপমহাপরিদর্শক) নেতৃত্বে ৩৫৮ জন পুলিশ সদস্য এবং ডিএমপির ১৩২ জন সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ডিএমপির ১৩২ সদস্যের মধ্যে ৪৬ জন নারী পুলিশ রয়েছে।
ডিএমপির কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন বলেন, পরিদর্শনকালে মেট্রোরেলের নিরাপত্তার ছোট ছোট কিছু বিষয় চোখে পড়েছে। এর জন্য কী কী করণীয়, তা নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনের নিরাপত্তা বিভাগের ব্যবস্থাপক মেজর (অব.) গোলাম রসুল আজাদসহ উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে সেবার মান বৃদ্ধি নিয়েও কথা হয়েছে। এসব আজকে থেকেই চালু হবে।
তিনি বলেন, স্টেশনের ভেতরে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, সংশ্লিষ্টদের এগুলো মনিটর করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রেখে নোটিশ করতেও বলা হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ওয়্যারলেস সেট থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমআরটি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে বলেন তারা যেন দ্রুত লাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ের ব্যবস্থা করে। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য শনাক্তে যেন যন্ত্র রাখারও ব্যবস্থা করে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও এমআরটি পুলিশের সঙ্গে ডিএমপি মেট্রোরেলের নিরাপত্তা দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
খ. মহিদ উদ্দিন জানান, নিরাপত্তা বাড়াতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে মেটাল ডিটেক্টর দেবে ডিএমপি। এ ছাড়া নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে আরও কোনো সহযোগিতা লাগলে তা করতে ডিএমপি প্রস্তুত।
বেলা দেড়টার দিকে খ. মহিদ উদ্দিন মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনে যান। তিনি স্টেশনের নিচতলা থেকে তৃতীয় তলার বিভিন্ন বিভাগ ও স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে দেখেন এবং সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা জোরদারে পরামর্শ দেন। এ সময় ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা, পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের দুই অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবাইয়াত জামান, মৃত্যুঞ্জয় দে ও পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাসুক মিয়া উপস্থিত ছিলেন। পরে মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও থেকে শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত যান ডিএমপির এই কর্মকর্তা।