রাজধানীর বংশাল থানার মিরনজিল্লা হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের উচ্ছেদ স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার পর রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড় প্রায় ১০ মিনিট অবরোধ করে রাখা হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, নাগরিক সমাজ ও হরিজন ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
মিরনজিল্লা হরিজন কলোনির বাসিন্দাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদের অবসান এবং নির্যাতন–নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে আজ সারা দেশে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এই আয়োজনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হয়।
আজ বেলা আড়াইটার পর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত হন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিক্ষোভকারীরা। সেখানে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন তাঁরা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব থেকে মৎস্য ভবন মোড়ে গিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। অবরোধ শেষে আবার বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব এলাকায় আসেন তাঁরা।
সমাবেশ, অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিলে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়। উচ্ছেদের প্রতিবাদে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়েও এই কর্মসূচিতে অংশ নেন হরিজন সম্প্রদায়ের নারী–শিশুরা।
প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশে কয়েকটি দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে মিরনজিল্লার হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের করা মামলা তুলে নেওয়া, দক্ষিণ সিটির মেয়রের ‘ষড়যন্ত্র ও বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্য প্রত্যাহার করা, সব ধরনের উচ্ছেদ পরিকল্পনা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং মিরনজিল্লার বাসিন্দাদের নামে জমির দলিল করে দেওয়া।
সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক। এ সময় বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও। দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে উদ্দেশ করে সমাবেশে তিনি বলেন, নগরপিতা না হয়ে উচ্ছেদকারী হিসেবে তিনি (মেয়র) আবির্ভূত হয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র উচ্চ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত চৌধুরী।
মৎস্য ভবন মোড়ে সড়ক অবরোধের সময় ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, মিরনজিল্লার হরিজন সম্প্রদায়ের মা–বোনদের ওপর অত্যাচার ও উপাসনালয়ে আঘাত করার দায় মেয়র এড়াতে পারেন না। দাবি মানা না পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ লাল, ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, শ্যামল রায়, কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ বসু, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, মধুমিতা বড়ুয়া প্রমুখ।
ভুক্তিভোগীদের অভিযোগ, গত ১০ জুন বিনা নোটিশে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এতে বাস্তুহারা হয় কলোনির প্রায় ৫০টি পরিবার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৩ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে উচ্ছেদপ্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পক্ষগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
মিরনজিল্লার হরিজন সম্প্রদায়ের অভিযোগ, এই স্থিতাদেশ এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ৯ জুলাই ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আবার উচ্ছেদ অভিযান চালায়। তার পরদিন (১০ জুলাই) সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের নেতৃত্বে মিরনজিল্লা হরিজন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে অনেকে আহত হন।