মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত এসেছিলেন ইদ্রিস আলী। কিন্তু মোহাম্মদপুরে তাঁর সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে দেন ব্যাটারিচালিত রিকশার শ্রমিকেরা। তাই মাকে নিয়ে এভাবে যাচ্ছেন তিনি
মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত এসেছিলেন ইদ্রিস আলী। কিন্তু মোহাম্মদপুরে তাঁর সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে দেন ব্যাটারিচালিত রিকশার শ্রমিকেরা। তাই মাকে নিয়ে এভাবে যাচ্ছেন তিনি

ব্যাটারি রিকশাচালকদের অবরোধ: ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছেন অসুস্থ মা

কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে রাজধানীর মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এসেছিলেন ইদ্রিস আলী (৩৫)। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে এসেছিলেন। বেলা ১১টার মধ্যেই ডাক্তার দেখানোর কাজ শেষ হয়। এর পর থেকেই বিপত্তি। বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষার পর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পেয়েছিলেন। কিন্তু মহাখালীতেই ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের ডাকা সড়ক অবরোধের মুখে পড়েন।

অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর তাঁরা ইদ্রিস ও তাঁর মাকে বহন করা অটোরিকশা ছেড়ে দেন। কিন্তু এদিকে বসিলা সড়কও আটকে রেখেছেন ওই চালকেরাই। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে যখন মোহাম্মদপুরের আল্লাহ করিম মসজিদ পর্যন্ত আসেন, সেখানে আবার সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকে দেন চালকেরা। কোনোক্রমেই এবার আর ছাড়া পাননি ইদ্রিস। তাই অসুস্থ মাকে কাঁধে ভর দিতে বলেন তিনি। এভাবেই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে অনেকটা পথ হাঁটতে হয় মাকে। বাধা পেরিয়ে বেশ খানিকটা পথ হেঁটে আবার একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ঘাটারচরের দিকে রওনা হন তিনি।

স্কুল থেকে সন্তানদের নিয়ে ফেরার পথে দুর্ভোগ, বসিলায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে

আজ সকাল থেকেই রাজধানীর বসিলার চৌরাস্তার পুরো জায়গা ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকেরা অবরোধ করে রেখেছেন। এসব স্থান দিয়ে চলা সব রকমের যানবাহন তাঁরা আটকে দিয়েছেন। শুধু বসিলা নয়, এমন অবরোধ চলে মহাখালী, আগারগাঁওসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায়।

বসিলায় রাস্তা অবরোধ করায় গাবতলী থেকে আমিনবাজারের দিকে যেতে পারছেন না কেউ। মোহাম্মদপুর থেকে কেরানীগঞ্জের দিকে যাওয়ার সেতুও বন্ধ। এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বয়সী ব্যক্তি, রোগী—সবাই পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

বসিলায় কথা হয় ব্যাটারিচালিত রিকশার এক চালকের সঙ্গে। অবরোধে তিনিও ছিলেন। তিনি বলেন, আগের সরকার এই রিকশা বৈধ করার পর অনেক মানুষ নতুন করে এই পেশায় এসেছেন। অনেকেই ঋণ করে রিকশা কিনেছেন। এখন যদি হঠাৎ করে এটা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে হাজার হাজার মানুষ বিপদে পড়বেন।

আজ আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনের কাছের চৌরাস্তা সকাল ৯টা থেকেই আটকে দিয়েছিলেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকেরা। এ সময় গাড়ি যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাস্তা ছাড়েন চালকেরা। এ সময় এপিবিএনের সদস্যদের এলাকায় দেখা যায়। তাঁরা চালকদের সঙ্গে কথা বলেন।

আগারগাঁওয়ে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি মিরপুর ১০ থেকে মতিঝিলে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে বাস ছেড়ে পায়ে হেঁটে যেতে শুরু করেন। রফিকুল বলেন, ‘ব্যাংকের কাজে মতিঝিল যাচ্ছিলাম। এভাবে রাস্তা বন্ধ করা তো ঠিক না। এর আগেও তারা এমন করেছে। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা  নিয়ে এর সুরাহা করা দরকার।’

এই সড়কের অনেক গাড়ি মূল সড়ক বাদ দিয়ে শ্যামলী হয়ে গন্তব্যে চলে যায়। তবে অবরোধকারী চালকেরা শিক্ষার্থী ও রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ছেড়ে দিয়েছেন।
এখানে রিকশাচালক সুমন মিয়া বলেন, ‘দুই দিন ধইর‌্যা গাড়ি চলতেছে না। আমরা তো চাই না ভিআইপি বা মূল সড়কে গাড়ি চালাই। কিন্তু অন্য সড়কগুলাতে তো চালাইতে দিতে পারে। লোন কইর‌্যা গাড়ি কিনছি। ২ তারিখ (ডিসেম্বর) লোনের কিস্তি আছে। কী কইর‌্যা দিমু তাই?’

গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই দিন রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় আফসানা করিম নামের এক ছাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।