রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা মোহাম্মদ শামীম, বাদশা আলী ও আনোয়ারুল ইসলাম। প্রথম দুজন ঝুট কাপড়ের (তৈরি পোশাক কারখানার ফেলে দেওয়া কাপড়) দোকানে কাজ করেন। তৃতীয়জনের রয়েছে গৃহস্থালির পণ্যের ছোট ব্যবসা। তাঁরা কেউই পেশাদার কসাই নন; কিন্তু ঈদের দিন আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুরের প্যারিস রোড মাঠ এলাকায় তাঁরা ব্যস্ত কোরবানির গরুর মাংস কাটাকাটির কাজে।
কথা হলো ওই তিনজনের সঙ্গে। ঈদের জামাত শেষ করেই সকাল সোয়া আটটা থেকে তাঁরা গরু কোরবানি দেওয়া ও মাংস কাটাকাটির কাজ শুরু করেছেন। তাঁরা ৯ জনের দল। আজ আটটি গরু কোরবানি দেওয়া ও মাংস কাটাকাটির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শামীম, বাদশা ও আনোয়ারুল দ্বিতীয় গরুটির মাংস কাটাকাটি করছিলেন প্যারিস রোড মাঠে। বাকিদের মধ্যে তিনজন আরেকটি গরুর চামড়া ছাড়াচ্ছিলেন। অন্য তিনজন আরেকটি গরুর মাংস কাটকাটি করছিলেন।
ঈদে এই কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ শামীম প্রথম আলোকে জানান, ঈদের দিন ঝুটের দোকান বন্ধ থাকে, কোনো কাজ থাকে না। আর গরুর মাংস কাটাকাটি করার কাজটি তিনি যেহেতু জানেন, তাই বসে না থেকে এ কাজটি করেন। তাতে তাঁর কিছু নগদ টাকা আয় হয়।
সারা দিনে কত টাকা আয় হয় জানতে চাইলে শামীম বলেন, গরুর মাংস কাটাকাটির ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক ঠিক হয় সেই গরুর দামের ওপর। সাধারণত হাজারে ৫০-৬০ টাকা হিসাব ধরে চুক্তি করা হয়। এই হিসাবে এক লাখ টাকার গরু হলে তারা নেন পাঁচ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন যাঁদের করছি, কয়েক বছর ধরেই তাঁদের কেনা গরুর মাংস প্রস্তুত করে দিয়ে থাকি। তাঁদের এবার তিনটি গরু। এ জন্য আমাদের মোট ২৫ হাজার টাকা দেবে। এ ছাড়া অন্য চারটি গরু প্রস্তুত করতে ৯ থেকে ১২ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছে।’
কথা বলতে বলতে বড় একটি মাংসের খণ্ড কাটার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন শামীম। ওই ফাঁকে কিছুটা জিরিয়ে নিচ্ছিলেন আনোয়ারুল। তিনি মূলত মাংসগুলো রান্নার উপযোগী করে ছোট ছোট টুকরা করছিলেন। এই সুযোগে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
তিন বছর ধরে এই দলের সঙ্গে কোরবানির দিন কাজ করেন জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, ‘ঈদের দিন বইসা না থাইকা মাংস বানানোর কাজ করলে নগদ ছয়-সাত হাজার টাকা রুজি হয়। যাদের গরু বানাই, তাঁরাও খুশি হইয়া টাকা ছাড়াও কিছু মাংস দেয়। ওইটা রাতে বাড়িত গিয়া রাইনধা ঈদ করি।’
ঈদকে কেন্দ্র করে ‘মৌসুমি কসাইয়ের’ কাজ যাঁরা করেন, তাঁদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেশাদার কসাইরা গরুপ্রতি হাজারে ১০০ টাকার নিচে কাজ করেন না। অর্থাৎ এক লাখ টাকার গরু হলে কসাইদের ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। ‘মৌসুমি কসাইরা’ হাজারে ৫০-৬০ টাকাতেই কাজ করেন। তবে পেশাদার কসাইরা এক ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেন। আর ‘মৌসুমি কসাইদের’ সময় লাগে দেড় ঘণ্টার বেশি।
কল্যাণপুরের বাসিন্দা সামছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পেশাদার কসাইদের দিয়ে কোরবানির গরুর মাংস কাটিয়েছেন। তাদের হাজারে ১০০ টাকা হিসেবে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কসাইরা তিনজনে মিলে এক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের কাজ শেষ করেছেন।