জাতীয় সংসদসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতিনিধিত্ব নেই। অন্যরা দায়িত্ব নিয়ে এসব মানুষের পক্ষে কথা বলেন না।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এবং মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেছেন হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডাররা। জাতীয় সংসদে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সংরক্ষিত আসনের দাবিতে এ মানববন্ধন হয়।
তাঁরা বলছেন, হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার, রূপান্তরিত নারী বা পুরুষের বঞ্চনা শুরু হয় পরিবার থেকে। শিক্ষা, চাকরি, বাসস্থান, রাজনৈতিক অধিকার—সব ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা সুস্থ জীবন এ মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে আয়োজিত মানববন্ধন ও আলোচনা সভায় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের পরিচালিত বিভিন্ন সংস্থার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে সুস্থ জীবনের চেয়ারম্যান পার্বতী আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এ দেশে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। অথচ হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডারদের বিভিন্ন সুবিধা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অথচ আমরা ভোট দিই। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আমাদের অংশগ্রহণ না থাকলে আমাদের কথা কেউ বলবে না। সংসদে আমাদের কথা আমাদেরই বলতে হবে।’
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন পূর্ণ হবে সবার অংশগ্রহণে, সবাই মিলে অঙ্গীকার করি, বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ি—এ ধরনের লেখার পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দেন।
সম্পর্কের নয়া সেতুর সভাপতি জয়া সিকদার বলেন, ২০১৩ সালে সরকার হিজড়া লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে হিজড়া সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাইরে ট্রান্সজেন্ডারসহ অন্য লিঙ্গ বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষেরা স্বীকৃতি থেকে বাদ পড়ে গেছে। সরকারকে এ দিকটাও ভাবতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, পরিবার থেকে এ ধরনের মানুষগুলোকে বের করে দেওয়া হয়। তার পর থেকে নিজের আয়ে চলতে গিয়ে প্রতি পদে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। আইনি ঝামেলা পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। আর তাঁদের যে সমস্যা, তা তাঁরা না বললে অন্যরা তা বুঝতেও পারবে না।
হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আখতার পিংকী, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ৬ নম্বর ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতুসহ বিভিন্ন নাম সামনে এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যও হয়েছেন অনেকে। এখন প্রয়োজন এসব মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন।
মানববন্ধনে আরিফা ইয়াসমীন ময়ূরী, সিলেটের মাহফুজ আলম, রাজবাড়ীর তানিশা ইয়াসমিন চৈতি, ঢাকার ইভান আহমেদ কথা প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।