তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে ‘আয়নাঘরের’ ভয়াবহ অভিজ্ঞতাসহ অসংখ্য নিপীড়নের ভয়াবহ গল্প আছে। সেগুলো এতটাই ভয়াবহ যে যাঁরা এর শিকার হয়েছেন, তাঁরা এখন সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চান না। তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁদের বারবার অনুরোধ করেছে। তারপরও তাঁরা বলতে চান না; এতটাই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল তাদের।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে কথাগুলো বলেন নাহিদ ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে ‘বিদ্রূপ ও উপহাসের রাজনীতি: জুলাই বিদ্রোহের সময় কার্টুন ও গ্রাফিতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গত ১৫–১৬ বছরের যে এত এত নিপীড়ন এবং মানুষের যে এত এত গল্প, এগুলো মানুষ আর্টওয়ার্কের (শিল্পকর্ম) মধ্য দিয়ে জানছে। মেইনস্ট্রিম (মূলধারার) পত্রিকাগুলোতেও কিন্তু তখন কার্টুন আঁকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’
এ সময় নিজের আয়নাঘরে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আয়নাঘর, যেখানে মানুষকে গুম করা হতো, আমারও আয়নাঘরের অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেখানে ২৪ ঘণ্টা থাকার। আমি থেকেছি সেই রুমেয় এবং দেখেছি দেয়ালে তাঁদের লেখা, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বন্দী ছিলেন।’
শিল্পীরা যদি তাঁদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে নিপীড়নের বিষয়গুলো নিয়ে আসেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে, মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে, তাহলে বিগত রেজিমটা (আওয়ামী লীগের শাসনামল) আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনটাও আসলে দেয়াললিখন এবং আর্টওয়ার্কের (শিল্পকর্মের) মাধ্যমে এগিয়েছে। আমরা এখন চিন্তা করছি এগুলো সংরক্ষণ করার। মানুষ আসলে কী বলতে চেয়েছিল এবং মানুষ আসলে কী বলতে চায়, এগুলোর উপাদান আমরা সেখানে পাব।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আয়নাঘর–গুম এসব বিষয় নিয়ে আগে কেউ কথা বলতে পারতেন না। তিনি বলেন, গুম কমিশনে প্রায় এক হাজার ছয় শতাধিক আবেদন করা হয়েছে। এই সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হাজার হতে পারে। গত ১৫–১৬ বছরে পাঁচ হাজার মানুষের গুমের অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি ছাত্র–জনতার আন্দোলনে দেয়াললিখন, ভাষা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার কীভাবে আন্দোলনকে বিস্ফোরিত করেছে, তার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, ‘আন্দোলনের সময় কয়েক দিন আগেও যারা আমাদের ছেলেদের মেরেছে লাঠি দিয়ে, আওয়ামী লীগের এমন লোকের প্রমোশনের জন্যও এখন তদবির করে বিএনপির লোক, তদবির করে জামায়াতের লোক।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদ প্রমুখ।