ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ) আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। ঈদের দিন আজ বেলা দুইটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা দুই সিটির মেয়ররা।
বেলা দুইটার দিকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এক নম্বর ফটকের বিপরীত পাশে বর্জ্য অপসারণ কাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। আর দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হলে থেকে পরিচালিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ সময় দক্ষিণ সিটির সব অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনলাইনে যুক্ত হন। অবশ্য এর আগেই সকালের ঈদের জামাতের পর থেকেই কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেন দুই সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ভ্যান সার্ভিসের কর্মীরা।
বর্জ্য অপসারণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘোষণা দিয়েছিলাম, ছয় ঘণ্টার মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করব। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে অনেক ওয়ার্ডে নির্ধারিত জায়গায় পশু কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এভাবে কোরবানি দিলে বর্জ্য অপসারণের কাজটি সহজ ও দ্রুত হয়। তাই যেসব এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে একই স্থানে কোরবানি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আগামী বছর থেকে যে ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি একই স্থানে কোরবানি দেওয়া হবে, ওই ওয়ার্ডকে পুরস্কৃত করা হবে।’ পাশাপাশি ওই ওয়ার্ডের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ বেশি করে দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
আর দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, মেয়র তাপস দেশের বাইরে থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বর্জ্য অপসারণ কাজের নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি বর্জ্য অপসারণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ কাজ শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আশা করা হচ্ছে, এরও অনেক আগেই কাজ শেষ হবে।
দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ বিভাগ জানায়, বর্জ্য অপসারণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার আগেই তাঁদের আওতাধীন এক নম্বর ওয়ার্ড (খিলগাঁও এলাকা) শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করেছে। ওই ওয়ার্ডে সকাল ১০টায় বর্জ্য অপসারণকাজ শুরু হয়।
এদিকে দুই সিটিতে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজে সাড়ে ১৯ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকায় বর্জ্য অপসারণে কাজ করছেন ১০ হাজার ২৫৭ জন কর্মী। আর ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন এলাকায় এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৯ হাজার ৩৩৭ কর্মী।
দুই সিটির এই ১৯ হাজার কর্মীর মধ্যে ৮ হাজার ৭০০ জনই প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারস (পিডব্লিওসিএসপি) বা ভ্যান সার্ভিসের কর্মী। যাঁরা মূলত টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এর বাইরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কর্মী ওই দিনের জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে। বাকি ৯ হাজার ৭০০ কর্মী দুই সিটিতে কাজ করা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
কোরবানির হাট ও পশুর বর্জ্য অপসারণ তদারকিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হল থেকে এ নিয়ন্ত্রণকক্ষ পরিচালিত হবে। ঈদের দিন বেলা দুইটা থেকে পরদিন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে মাঠে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়া বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণ না হলে বাসিন্দারা নিয়ন্ত্রণকক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ ও ০২২২৩৩৮৬০১৪ নম্বরে ফোন করে তথ্য ও অভিযোগ জানাতে পারবেন।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষও। বাসিন্দারা বর্জ্য অপসারণকাজ নিয়ে যেকোনো তথ্য কিংবা অভিযোগ সিটি করপোরেশনের ১৬১০৬ নম্বরে কল করে জানাতে পারবেন। পাশাপাশি ওয়ার্ড ও অঞ্চলভিত্তিক তদারকি দলও গঠন করা হয়েছে।
এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কোরবানির হাটের বর্জ্য ও কোরবানির পশুর বর্জ্য পৃথকভাবে অপসারণের কাজ করবে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে তাদের ৫৬০টি যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে। আর হাটের বর্জ্য অপসারণে ৫৭টি ডাম্প ট্রাক, ১২টি পে-লোডার ও ১১টি টায়ার ডোজার নিয়োজিত করা হবে। আর ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন এলাকায় ৫২০টি ভারী যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া দুই সিটিতেই পলিব্যাগ, ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন, টুকরি ও ফিনাইল বিতরণ করা হয়েছে।