রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসচাপায় আবু সায়েমের (৩৫) মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করেছেন তাঁর ভাই আবু সাদাত সাহেদ। গতকাল শনিবার রাতে যাত্রাবাড়ী থানায় করা মামলায় বাসচালক শাহ আলম (৪০) ও তাঁর সহকারী মোহনকে (২২) আসামি করা হয়েছে। আজ রোববার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ঘটনাকে হত্যা দাবি করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছেন সায়েমের স্বজনেরা।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে সায়েমের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিকেল ৪টার দিকে তাঁর লাশ নেওয়া হয় যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সরণিতে। বাসার গলির মুখে লাশবাহী গাড়িটি রাখা হয়। এ সময় শেষবারের মতো সায়েমকে দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। তাঁর মা ষাটোর্ধ্ব হামিদা বেগম বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘আমারে থুইয়া কই গেলি তুই। আমারে নিয়া গেলি না কেন।’
এর আগে দুপুরে সায়েমের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, হামিদা বেগম একটি কক্ষে জায়নামাজে বসে আছেন। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছিলেন না তিনি। সেখানে কথা হয় সায়েমের ভগ্নিপতি মো. মনিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, সায়েমের বাবা হেদায়েত উল্লাহ মারা গেছেন তিন বছর আগে। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সায়েম তৃতীয়। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। তাঁর ভাই আবু সাদাত সাহেদ আলাদা থাকেন। এ বাসায় মা হামিদা বেগমকে নিয়ে থাকতেন সায়েম।
সায়েমের ভাই আবু সাদাত সাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইকে বাস থেকে ফেলে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ হত্যার বিচার চান। তবে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাসের চালক ও সহকারী সায়েমকে ধাক্কা দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। এখন পর্যন্ত ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি।
সায়েমের বাসার গলির বিপরীত পাশে শহীদ ফারুক সরণিতে নূর স্টোর নামে একটি কনফেকশনারির দোকান রয়েছে। দোকানটির মালিক ইমাম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ সড়কে সাধারণত ৮ নম্বর বাস চলাচল করে না। সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী আসার মূল সড়কে যানজট হলে এ সড়ক ব্যবহার করে যাত্রাবাড়ীর দিকে যায় যাত্রাবাহী বাস।
ইমাম হাসান আজ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেলে ৮ নম্বরের বাসটি এ সড়ক দিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাচ্ছিল। তিনি তখন দোকানেই ছিলেন। বাসটি তাঁর দোকানের সামনে আসার পর ভেতরে হট্টগোল শুনতে পান তিনি। কেউ একজন চিৎকার করে তাঁকে নামিয়ে দিতে বলছিলেন। কিন্তু বাসটি তখন গতি বাড়িয়ে সামনে চলে যায়। তাঁর দোকান থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে টনি টাওয়ারের সামনে গিয়ে বাসটি থামে।
এরপর সেখানে হট্টগোল দেখে এগিয়ে যান জানিয়ে এই দোকানি বলেন, সেখানে একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। উপস্থিত লোকজন বলছিলেন, বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পর বাসের পেছনের চাক্কায় পিষ্ট হয়েছেন ওই ব্যক্তি।
একপর্যায়ে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ লোকজন বাসের চালক শাহ আলম এবং তাঁর সহকারী মো. মোহনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। তাঁদের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
নিহত সায়েমের ভগ্নিপতি মনির জানান, একটি পোশাক কারখানার মতিঝিল কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (ভ্যাট অ্যান্ড ট্যাক্স) হিসেবে কাজ করতেন সায়েম। গতকাল বিকেলে কাজ শেষে বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে ৮ নম্বর বাসের চালকের সহকারীর সঙ্গে সায়েমের ঝগড়া হয়। বাসার কাছে শহীদ ফারুক সরণির টনি টাওয়ারের সামনে নামার সময় চালকের সহকারী সায়েমকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের জানিয়েছেন।
রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা নিট প্লাস লিমিটেডে জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (ট্যাক্স অ্যান্ড ভ্যাট) হিসেবে কর্মরত ছিলেন সায়েম। এ প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিভাগের প্রধান আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সায়েম সাড়ে ৬ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। শুক্রবার বিকেল ৫টার সময় কাজ শেষে তিনি মতিঝিলের কার্যালয় থেকে বের হন। সাড়ে ৬টার দিকে সায়েমের মৃত্যুর খবর পান। এ ঘটনাকে হত্যা দাবি করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন তিনি।