আদি বুড়িগঙ্গার চেহারা বদলেছে, হতে পারে আরেক হাতিরঝিল

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল। কালুনগর খাল, ২৩ মার্চ
ছবি: দীপু মালাকার

তিন বছর আগেও আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের এমন অবস্থা ছিল যে শুকনা মৌসুমে শিশু-কিশোরেরা সেখানে খেলাধুলা করত। এ পথে বর্ষার মৌসুমেও ঠিকমতো পানিপ্রবাহ ছিল না। বর্জ্য ও পলি পড়ে হয়ে গিয়েছিল মৃতপ্রায়। তবে গত এক বছরে চ্যানেলটির চেহারা অনেকটা বদলেছে। এটি যে বুড়িগঙ্গা নদীর একটা শাখা, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের অবস্থান লালবাগের ইসলামবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার মধ্যে। আদি চেহারায় ফিরতে থাকা চ্যানেলটিকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ইতিমধ্যে প্রায় ২২ কোটি টাকা খরচ করে সেখান থেকে বর্জ্য ও পলি অপসারণ করা হয়েছে। আরও ১৪ কোটি টাকা খরচ করে চলছে বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি।

চ্যানেলের সীমানা কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে হাজারীবাগের রায়েরবাজার পর্যন্ত। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি সচল করা গেলে লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ডিএসসিসি একসময় মৃতপ্রায় হয়ে পড়া চ্যানেলটিকে হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে চায়। সে লক্ষ্য ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে।

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের সীমানা কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে হাজারীবাগের রায়েরবাজার পর্যন্ত। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি সচল করা গেলে লালবাগ, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কামরাঙ্গীরচরে নির্বাচনী জনসভায় আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওই সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটির তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় চ্যানেলটি উদ্ধারের পরিকল্পনা হাতে নেয় সংস্থাটি।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাবেক মেয়র ড্রোন দিয়ে এই চ্যানেলের ভিডিও চিত্র তৈরি করে একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত করেন। তবে কাজের কাজ হয়নি। পরে বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও সচল করতে নতুন করে কার্যক্রম হাতে নেন।


২৪ মার্চ চ্যানেল ঘুরে দেখা গেছে, বর্জ্যে ঠাসা চ্যানেল হয়ে এখন পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বেশির ভাগ জায়গা থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ হয়েছে। চ্যানেল থেকে তোলা বর্জ্য ও পলির কিছু অংশ পাড়ে রাখা হয়েছে। এসব জমে অনেকটা রাস্তার মতো হয়ে গেছে। যদিও এটি চলাচলের উপযোগী হয়নি।

আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল। কামরাঙ্গীরচর, ২৩ মার্চ

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চ্যানেলের পাশে হাঁটার পথ তৈরির পরিকল্পনা থেকেই পাড়ে কিছু পলি ও বর্জ্য ফেলা হয়েছে। চ্যানেল পরিষ্কার করার কার্যক্রম শুরুর আগে এটি দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হয়েছিল। অভিযানে বহুতল কয়েকটি ভবনের একাংশ অপসারণের নির্দেশনা দিয়েছিল দক্ষিণ সিটি। অপসারণের কাজ এখনো চলছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর মেয়র ফজলে নূর তাপস জলাবদ্ধতা নিরসন করতে জরুরি কিছু কাজ ঠিক করেছিলেন। তখন আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল থেকেও বর্জ্য অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে গত অর্থবছর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ চ্যানেল থেকে আড়াই লাখ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। মেয়র সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, চ্যানেলটিকে নতুন রূপে সাজাবেন।

এ কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীরা বলছেন, কীভাবে এ চ্যানেলকে হাতিরঝিলের রূপ দেওয়া, বিনোদনের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা ও অবসর সময় কাটানোর উপযুক্ত জায়গা হিসেবে গড়ে তোলা যায়, এ-সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনার তৈরি করতে গত অক্টোবরে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত কাজ আগামী মে মাসের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ হলে পরিকল্পনা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। অনুমোদন পেলে হাতিরঝিলের আদলে আদি বুড়িগঙ্গাকে সাজাতে চার বছর লাগতে পারে। চ্যানেলটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে কত টাকা খরচ হতে পারে, তা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির পর বলা যাবে।

এদিকে পুরোনো এই চ্যানেলকে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সীমানা চিহ্নিত করার কাজ শেষ হয়েছে। অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাশাপাশি বসানো হয়েছে সীমানাখুঁটি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের প্রথম আলোকে বলেন, সপ্তাহের প্রতি বুধবার দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করেন মেয়র। চ্যানেলটির উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

শেখ ফজলে নূর তাপসের বরাত দিয়ে এই মুখপাত্র বলেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আদি বুড়িগঙ্গা শুধু ভরাট হয়েছে। এই প্রথম বাস্তবে আদি বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। যদিও কাজটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দুরূহ।

নদীর দুই পাশ দিয়ে হাঁটার পথ, সাইকেল চালানোর পথ, গণপরিসরের ব্যবস্থা করে সেখানে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে; যাতে ঢাকাবাসীর পাশাপাশি পর্যটকেরা স্থানটি পরিদর্শন করতে আসেন।
মো. আবু নাছের, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র

চ্যানেলটি ঘিরে মেয়রের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে নিজস্ব অর্থায়নে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে। চ্যানেলটিকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। এর মূল লক্ষ্য, নদীটা সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার ও স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা; যাতে আর কেউ এটা দখল করতে না পারে। আর কেউ ময়লা-বর্জ্য ফেলার সুযোগ না পায়।

নদীর দুই পাশ দিয়ে হাঁটার পথ, সাইকেল চালানোর পথ, গণপরিসরের ব্যবস্থা করে সেখানে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে; যাতে ঢাকাবাসীর পাশাপাশি পর্যটকেরা স্থানটি পরিদর্শন করতে আসেন, জানান আবু নাছের।