পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে খাবারের দোকানের জন্য নতুন করে ইজারার পরিকল্পনার প্রতিবাদে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ঢাকা, ২১ অক্টোবর
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে খাবারের দোকানের জন্য নতুন করে ইজারার পরিকল্পনার প্রতিবাদে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ঢাকা, ২১ অক্টোবর

বাহাদুর শাহ পার্কে নতুন ইজারা গণবিরোধী সিদ্ধান্ত: আনু মুহাম্মদ

রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কে খাবারের দোকান বসাতে নতুন করে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাকে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, যদি এ ইজারা দেওয়া হয়, তাহলে পুরান ঢাকাবাসী আগের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

ইজারার পরিকল্পনার প্রতিবাদে আজ সোমবার পার্কের ভেতরে শহীদ স্মৃতি বেদিতে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। ‘ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ’ এই সমাবেশের আয়োজন করে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, যদি (পার্ক) ইজারা দেওয়া হয়, পুরান ঢাকাবাসী আগের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ রক্ষায় অনেক কাজ করেছেন। তিনি বাহাদুর শাহ পার্কের খাবার দোকান বিষয়ে অবহিত আছেন। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা, পরিবেশ উপদেষ্টা ও অন্যরা এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।’ তিনি বলেন, গত সরকারের সময়ে স্থানীয় লোকজনের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে পার্কে খাবারের দোকান করার জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল।

সমাবেশে সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব আক্তারুজ্জামান বলেন, ইজারা বাতিলের দাবিতে ৮ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসককে জরুরি চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরদিন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জরুরি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতেও কাজ না হওয়ায় পরিবেশ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপির অনুলিপি দেওয়া হয়। তবুও করপোরেশন ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে একতরফা সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।

সদস্যসচিব আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকেও ১৫ অক্টোবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই সরকার প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংসের প্রকল্প বাতিল করতে যথাযথ ভূমিকা নেবে। তা না হলে পুরান ঢাকাবাসী রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।’

সভায় স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাও বক্তব্য দেন।

পুরান ঢাকায় ৮৫ দশমিক ৩ কাঠা আয়তনবিশিষ্ট বাহাদুর শাহ পার্কের চারপাশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজসহ অন্তত ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এই পার্ক ব্যবহার করেন। জনমত উপেক্ষা করে সেই পার্ক ইজারা দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। পার্কের ভেতরে খাবারের দোকান বসিয়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করার প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। পরে এই পার্ক রক্ষার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চারটি সংগঠন মিলে গড়ে তুলেছে ‘ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ’।

বাহাদুর শাহ পার্কের নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক। বাংলাপিডিয়ার তথ্য বলছে, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নওয়াব স্যার আব্দুল গণির উদ্যোগে ঢাকার সদরঘাট এলাকায় ‘আন্টাঘর’ নামের একটি আর্মেনীয় ক্লাবঘরের ধ্বংসাবশেষের ওপর পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের সময় ভিক্টোরিয়া পার্কে কয়েকজন বিদ্রোহীকে ফাঁসি দেওয়া হয়। সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের বেশ কয়েক বছর পর তাঁর নামানুসারে পার্কের নাম করা হয় ‘বাহাদুর শাহ পার্ক’।