ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে প্রশাসনের সংলাপ

ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবার সন্ধ্যায় উপাচার্যের সভাকক্ষে এ সংলাপ হয়। এ সময় ছাত্রসংগঠনের নেতারা বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও প্রস্তাব তুলে ধরেন।

এ সংলাপে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রশিবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ (মার্ক্সবাদী) বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের ১০টি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ছাত্রসংগঠনের নেতারা যা বললেন

সংলাপের বিষয়ে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আওয়ামী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, হলের খাবারের মান উন্নত করার বিষয়ে আমরা দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি ডাকসু নির্বাচন যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে আয়োজন করা হয়, আমরা সেই দাবি জানিয়েছি। তাঁরাও এসব বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু সংলাপ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ধরনের ভূমিকা নেবে,০ সেই বিষয়ে জানতে চাই। ডাকসুর গঠনতান্ত্রিক সংস্কার ও ভাস্কর্যনীতি তৈরির প্রস্তাব দিই।’

ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা বলেছি, ছাত্ররাজনীতি সংস্কার নিয়ে একটা অ্যাগ্রিমেন্ট হতে পারে। এটি হবে শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্ররাজনীতির অ্যাগ্রিমেন্ট। প্রশাসন এখানে মিডিয়েটর হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। গণ–অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে যেন সংগ্রহশালা করা হয়, শহীদ ও আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন সম্মাননা দেওয়া হয়, ছাত্রীদের জন্য যেন নতুন হল করা হয়—এসব বিষয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারীদের জন্য যৌন নিপীড়ন সেল গঠন করা। গঠনতান্ত্রিক সংস্কার করে দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দেওয়া। ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তা ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মব কালচার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবিগুলো পেশ করেছি।’

দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় ছাত্রসংগঠনের নেতারা

সংলাপে অংশ নেওয়া প্রায় সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা ডাকসুর গঠনতান্ত্রিক পরিবর্তনও চান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘমল্লার বসু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে বলেছি, ডাকসু নির্বাচনের আগে এর গণতান্ত্রিক সংস্কার আগে প্রয়োজন। আমাদের এখনকার ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপাচার্যকে সভাপতি করা হয়। তাঁর কাছেই থাকে সব ক্ষমতা। আমরা একটা গণতান্ত্রিক ডাকসু চাই।’

অপর দিকে আবু সাদিক কায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন নির্বাচন দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে, আমরা সেই দাবি জানিয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যা বলেছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রক্টর সহযোগী সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে সায়মা হক বিদিশা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, অংশীজনদের সঙ্গে কিছুদিন পরপর বসব। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বসেছিলাম। এখানে মূলত প্রশাসনে আসার পর আমরা কী কী করেছি এবং তাদের কী কী চাওয়া বা দাবিদাওয়া আছে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে সিন্ডিকেট, ছাত্ররাজনীতি, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, হলের পরিবেশ, হলের খাবারের মান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা—এসব বিষয় নিয়ে তাঁরা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন।’