শুধু রক্তের প্লাটিলেট নয়, রক্তচাপসহ কিছু লক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞের

রোগীর বিছানায় মশারি টাঙিয়ে চলছে চিকিৎসা
ছবি: ফাইল ছবি

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পরিবারের সদস্যরা সাধারণত রোগীর রক্তের প্লাটিলেট কমা-বাড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (এনসিডিসি) লাইন ডিরেক্টর রোবেদ আমিন বলেছেন, ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুঝুঁকি কমাতে প্লাটিলেট নিয়ে চিন্তিত না হয়ে অন্য কিছু লক্ষণের দিকে নজর রাখা জরুরি। এসব লক্ষণ হলো—রোগীর রক্তচাপ কমে যাওয়া, অবসাদগ্রস্ততা, ঘাম হওয়া ও বমিভাব। তাঁর মতে, এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রোবেদ আমিন এসব কথা বলেন।

রোবেদ আমিন আরও পরামর্শ দিয়েছেন, এসব লক্ষণ দেখা দিলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করে ফ্লুইড বা স্যালাইন দেওয়া জরুরি। সঠিক সময়ে সঠিক ফ্লুইড না দিলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুঝুঁকি থাকে বলে সতর্ক করেন তিনি।

বাংলাদেশে এডিস মশা কেন নির্মূল করা যাচ্ছে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রোবেদ আমিন বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই ডেঙ্গু একবার শুরু হওয়ার পর তা পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। সিঙ্গাপুরের মতো দেশেও তা সম্ভব হয়নি। এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ডেঙ্গু বা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। কিন্তু সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বাড়িতে বাড়িতে ছাদবাগান হচ্ছে। কিন্তু এসব গাছের টবে পানি জমে আছে কি না, তা ছাদবাগানের মালিকেরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন না, কিংবা কতটুকু পানি দিলে টবে পানি জমে থাকবে না, তা সবাই জানেন না। অনেকে গৃহকর্মীদের দিয়ে ছাদবাগান পরিচর্যার কাজ করিয়ে থাকেন। গৃহকর্মীরাও নিয়মিত জমে থাকা পানি পরিষ্কার করছে না।

রোবেদ আমিন মনে করেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনেরও সীমাবদ্ধতা আছে। কারণ, তারা তো আর বাড়ির ভেতরে গিয়ে মশা মারতে পারবে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ডেঙ্গু হলে রোগী ব্যবস্থাপনা নিয়ে লোকজনকে আরও সচেতন হতে হবে। এই বিশেষজ্ঞ আশা করেন, বৃষ্টি না হলে নভেম্বরের শেষ দিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলে যাবে।

হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রোবেদ আমিন বলেন, সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গুর চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করলে মৃত্যু কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

চলতি নভেম্বরের প্রথম সাত দিনে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৫৮ জন এবং এই সময়ে মারা গেছেন ৩৬ জন। গত অক্টোবর মাসে দেশে ২১ হাজার ৯৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, মারা যান ৮৬ জন। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত (৭ নভেম্বর) দেশে ৪৩ হাজার ৯৮২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ৫৩৫ রোগী। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু বাংলাদেশে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। করোনা মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। করোনা মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে ১ লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।