ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে, জনসন রোড, পুরান ঢাকা।
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে, জনসন রোড, পুরান ঢাকা।

পুরান ঢাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ন্যাশনাল মেডিকেল ও সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর

ভুল চিকিৎসায় রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনার বিচার চেয়ে পুরান ঢাকার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বেলা একটার পর এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে, ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকসহ হাসপাতালটির কর্মচারীরা বলেন, বেলা ২টার পর একদল শিক্ষার্থী কলেজের ভেতর ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে কলেজের একটি অ্যাম্বুলেন্সও।

কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে এ কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ বেলা একটার দিকে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন। এতে পুরান ঢাকার ব্যস্ত জনসন রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পুরান ঢাকার শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুরের পাশাপাশি সেখানে পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে, পুরান ঢাকা
দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজে আজ ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা ২টার পর এ কলেজের ভেতরে ঢুকে শ্রেণিকক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

সাইফুল ইসলাম নামে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়। ‘ভুল চিকিৎসায়’ অভিজিৎ মারা যায়। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার তাঁরা মেডিকেল কলেজটির সামনে বিক্ষোভ করেন।

সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, ওই দিন পুরান ঢাকার কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এর প্রতিবাদে আজ তাঁরা ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আবার পুরান ঢাকার সরকারি শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজসহ আশপাশের কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

ভাঙচুর করা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যর্থনাকক্ষ

সরেজমিন দেখা গেছে, দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মারামারিতে আহত কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢোকার প্রবেশপথে বিকেলেও অবস্থান করছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলেন।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। এতে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রোগীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
—রশিদুল হাসান, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক

শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিকেলেও ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে বিক্ষোভ করেন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক রশিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁদের হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। এতে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রোগীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সরকারি শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর করা একটি গাড়ি

শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজেও ব্যাপক ভাঙচুর

শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজেও আজ ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা ২টার পর এ কলেজের ভেতরে ঢুকে শ্রেণিকক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

মো. রিশান নামে শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের কোনো শিক্ষার্থীকে তাঁরা মারধর করেননি। অথচ ওই কলেজসহ অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের কলেজে এসে ভাঙচুর চালিয়েছেন।

এমন ভাঙচুর করা হয়েছে শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজের ১৭টি বিভাগে। আজ রোববার দুপুরে, পুরান ঢাকা

শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আকস্মিক কয়েক শ শিক্ষার্থী এসে কলেজের ১৭টি বিভাগে হামলা চালিয়েছে। তারা বিভাগগুলোর অফিসকক্ষ থেকে কম্পিউটার লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছিল। হামলাকারী শিক্ষার্থীরা ওই সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে।

এই কলেজে একটি মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেট কার ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায়।