টিএসসিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগের মতবিনিময়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর
 ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ‘একাডেমিক সংকট নিরসনে’ কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এই সভায় অংশ নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের নানা সমস্যা-সংকটের কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত সংকট সমাধানে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা হয়। সাত কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার চলমান বিরোধের প্রেক্ষাপটে এই সভা হলো। কয়েক মাস ধরে সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, যেগুলো বর্তমানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধীনে রয়েছে। সম্প্রতি সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ চেয়ে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন মাজহারুল ও তানভীর।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির বলেন, ২০১৭ সালে সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকেই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। তাঁদের সঙ্গে সবাই সৎভাইয়ের মতো আচরণ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানোন্নয়নসহ যেসব সুযোগ পাচ্ছে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তা পাচ্ছেন না।

মাজহারুল কবির আরও বলেন, ‘দেশের যেখানেই কোনো শিক্ষার্থী বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার হন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সাত কলেজের যেন একটি একাডেমিক ক্যালেন্ডার থাকে, পরীক্ষা ও ফলাফল যেন যথাসময়ে হয়, মানোন্নয়নের সুযোগ—এগুলো নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে তাঁরা যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও আমরা কথা বলব।’

তানভীর হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থী সাত কলেজের সংকট অনুভব করেন এবং তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের কথা বলতে চান, কাজ করতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিনগ্রহের মানুষ মনে করেন না। তাঁদের ভাই মনে করেন, অংশ মনে করেন এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

মতবিনিময় সভায় সাত কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে নানা দাবিদাওয়া ও সংকটের কথা। এগুলোর মধ্যে আছে—সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়নের মাধ্যমে প্রমোশনের সুযোগ নিশ্চিত করা, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব দূর করা প্রভৃতি।

সভায় ঢাকা কলেজের ছাত্র সাকিব আহমেদ বলেন, ‘সাত কলেজের ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য বছর বছর বিষয় প্রতি টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ফলে কোনো পরিবর্তন আসে না। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বারবার কেন বৈষম্যের শিকার হবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শোনেনি। কথা শুনতে আমাদের ডেকেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। আমরা তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়নের সুযোগ চাই। আপনারা (ছাত্রলীগ) আমাদের এই বিষয়টা দেখবেন।’

মতবিনিময় সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর

ফলাফল দেরিতে দেওয়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা বলে জানান ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। বদরুন্নেসা কলেজের সাদিয়া আক্তার মীম বলেন, ‘তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়নের মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে উন্নীত হওয়ার সুযোগ চেয়ে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। অথচ আমাদের থাকার কথা পড়ার টেবিলে।’

মতবিনিময় সভা শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তানভীর হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সাত কলেজের কমিটি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সাত কলেজের একাডেমিক উন্নয়ন তখনই হবে, যখন সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। সাত কলেজের রাজনীতিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির মতো সুশৃঙ্খল ও সুন্দর করতে চান বলে জানান তিনি।