পেশাগত কাজে ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে নিয়মিত যাতায়াত করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. শাহেরুজ্জামান। স্বাভাবিক সময়ে তিনি এই পথে ১ হাজার ২০০ টাকায় টিকিট কেটে যাতায়াত করেন, বিজনেস ক্লাসে। এখন ঈদযাত্রার জন্য তিনি এই টিকিট কিনেছেন ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে টিকিট কাটার পর রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে শাহেরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ৬০০ টাকা বেশি নিল। ঈদ এলেই ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হয়। এটি বন্ধ হওয়া দরকার।
বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করেননি—এমন প্রশ্নে শাহেরুজ্জামান বলেন, প্রতিবাদ করে কী লাভ! বাড়িতে তো যেতে হবে। এভাবেই তো চলে আসছে। বাসের বাড়তি ভাড়া যাতে না নেওয়া হয়, সেই তদারকি তো গাবতলীতে নেই।
রয়েল এক্সপ্রেস নামের একটি পরিবহনের কাউন্টার থেকে ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে যাওয়ার টিকিট কিনেছেন শাহেরুজ্জামান। বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এই পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মো. শান্ত প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন না। বরং সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার চেয়ে কমে টিকিট বিক্রি করছেন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত শুক্রবার থেকে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর চতুর্থ দিন আজ গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি।
টিকিট কাউন্টারে থাকা বিভিন্ন পরিবহনের কর্মীরা জানিয়েছেন, এবার টিকিটপ্রত্যাশীদের চাপ আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক কম। বিক্রি শুরুর প্রথম তিন দিনও খুব বেশি চাপ ছিল না।
তবে সারিতে না দাঁড়িয়ে নির্বিঘ্নে টিকিট কাটা গেলেও বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, নন-এসি বাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত ১০০ টাকা বেশি, এসি বাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে।
আগাম টিকিট বিক্রির চিত্র দেখতে আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে অবস্থান করেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক।
আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করে কাউন্টারগুলোর সামনে টিকিটপ্রত্যাশীদের সারি দেখা যায়নি। গাবতলী বাস টার্মিনাল ছিল অনেকটাই ফাঁকা।
অতীতে আগাম টিকিট পেতে কাউন্টারের সামনে লোকজনের দীর্ঘ সারি দেখা যেত। অনেকে টিকিট কেনার জন্য ভোররাত থেকে সারিতে দাঁড়িয়ে থাকত।
আগাম টিকিট নিতে এবার মানুষের উপস্থিতি এত কম কেন, তার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন গাবতলী বাস টার্মিনালে দীর্ঘদিন ধরে টিকিট বিক্রির সঙ্গে যুক্ত নুরুল আলম। দ্রুত পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা হিসেবে তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে কাজ করছেন। নুরুল আলম বলেন, আগে কেবল গাবতলীতেই বাসের আগাম টিকিট বিক্রি হতো। এখন পাড়া-মহল্লায় অনেক জায়গায় কাউন্টার হয়েছে। মানুষ সেসব কাউন্টারে গিয়ে টিকিট নিচ্ছে। আবার ঘরে বসে অনলাইনেও আগাম টিকিট কেনা যাচ্ছে। আরও বড় বিষয় হলো, পদ্মা সেতু চালুর পর গাবতলী এসে বাসে উঠে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালের ভেতরে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, কেবল রয়েল এক্সপ্রেস ও পূর্বাশা পরিবহন থেকে যাত্রীরা বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট কিনছেন। যাত্রীরা যেদিনের টিকিট চাচ্ছেন, সেদিনেরই টিকিট পাচ্ছেন। তবে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন টিকিট ক্রেতারা।
গাবতলী থেকে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে যেতে ৯ এপ্রিলের আগাম টিকিট কেনেন শামীম হোসেন নামের এক ব্যক্তি। রয়েল এক্সপ্রেস তাঁর কাছ থেকে টিকিটের দাম রেখেছে ৭৫০ টাকা। শামীম হোসেন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে এই রুটে নন-এসি বাসে ৬৫০ টাকা ভাড়া থাকে।
একই কাউন্টার থেকে চুয়াডাঙ্গায় যাওয়ার তিনটি টিকিট কিনেছেন জুনায়েদ রহমান নামের একজন শিক্ষার্থী। তিনি, তাঁর বাবা ও মা একসঙ্গে এবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঈদ করবেন। জুনায়েদ বলেন, তাঁর কাছ থেকে এসি বাসের তিনটি টিকিট ১ হাজার ৪০০ টাকা করে রাখা হয়েছে। তিনি মোট ৪ হাজার ২০০ টাকায় তিনটি টিকিট কিনেছেন।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিটি টিকিটের দাম ১ হাজার টাকা হয়ে থাকে বলে জানালেন পাশের আরেকটি কাউন্টারের একজন কর্মী।
পূর্বাশা পরিবহনে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় যেতে ১ হাজার ১০০ টাকা করে দুটি এসি বাসের টিকিট কিনেছেন এক ব্যক্তি। তিনি জানালেন, স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ৮০০ টাকা থাকে।
ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে পূর্বাশা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন না।
গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে টাঙানো একটি বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। বিজ্ঞপ্তিতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় টিকিট বিক্রির নির্দেশনা আছে। কিন্তু এই নির্দেশনা আমলে নিয়ে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।