ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত ভবন সিলগালায় ব্যবসায়ীদের বাধা

ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষিত আড়ত ভবনের দোতলা অংশ ডিএনসিসির কর্মকর্তারা সিলগালা করতে গেলে বাধা দেন ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১১ মে
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষিত কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়ত ভবনের দোতলা অংশ সিলগালা করতে গিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাধায় তাঁরা সিলগালা করতে পারেননি।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আড়ত এলাকায় যান ডিএনসিসির কর্মকর্তারা। এ সময় শত শত ব্যবসায়ী ও শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে নানা স্লোগান দেন। ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তারা ভবনের দোতলা অংশ সিলগালা না করেই ফিরে যেতে বাধ্য হন।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, আড়ত ভবনটি দোতলা। ভবনের নিচে কাঁচামালের আড়ত আছে। আর দোতলায় ১৭৬টি দোকান রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা ভবনে রেট্রো ফিটিংয়ের পরামর্শ দিয়েছিল।

ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ফিরে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১১ মে

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ভবনের ভার কমানোর জন্য দোতলা অংশে থাকা ১৭৬টি দোকান স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। দোতলার দোকানের ব্যবসায়ীরা যাত্রাবাড়ীতে স্থানান্তর হবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলেও তাঁরা তা করেননি। তাই দোতলা অংশ সিলগালা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, কারওয়ান বাজার স্থানান্তর কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান, সহসভাপতি ও সংরক্ষিত ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর হামিদা আক্তার, সদস্যসচিব ও ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ আড়ত এলাকায় যান। তাঁদের সঙ্গে ডিএনসিসির অন্যান্য কর্মকর্তা ও পুলিশের সদস্য ছিলেন। তাঁদের আড়তে প্রবেশে বাধা দেন বাজার কমিটির নেতা ও ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে ডিএনসিসির কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা আড়তের ভেতরে গিয়ে ভবনের দোতলায় ওঠার সিঁড়ির কাছে যান। সেখানে থাকা ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা। ডিএনসিসি কী করতে চায়, কেন সিলগালা করা হচ্ছে—এসব বিষয় নিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন।

আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কথা বলা শেষ হওয়ার পরেই ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা স্লোগান দিয়ে বলতে থাকেন—‘মানি না, মানব না’, ‘মার্কেট বন্ধ করা যাবে না’। তাঁরা একপর্যায়ে ‘ডাক দিয়েছে শামীম ভাই, বসে থাকার সময় না’ বলে কাউন্সিলরের পক্ষেও স্লোগান দিতে থাকেন।

এভাবে প্রায় আধঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। পরে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা আড়তের বাইরে বের হয়ে আসেন। ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বাজার কমিটি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবার কথা বলেন তাঁরা। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মালপত্র সরানোর জন্য দুই মাস সময় চাওয়া হয়। কিন্তু কারওয়ান বাজার স্থানান্তর কমিটির সভাপতি শামীম হাসান ব্যবসায়ীদের দুই সপ্তাহের সময় দেন। আগামী ২৫ মে ভবনের দোতলা অংশ সিলগালা করতে আবার আসবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।

কারওয়ান বাজার স্থানান্তর কমিটির সদস্যসচিব ও ডিএনসিসির অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলগালার সব প্রস্তুতি নিয়েই আমরা গিয়েছিলাম। বিষয়টি বাজার কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাজার কমিটির নেতারা বলছেন, তাঁরা জানেন না। তাঁদের এ কথা সত্য নয়।’

মোতাকাব্বীর আহমেদ আরও বলেন, আজকে তাঁরা যাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা উগ্র আচরণ করেছেন। সেখানে নড়াচড়ার করার মতো জায়গা ছিল না। শত শত লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে সিলগালা করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। রীতিমতো একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল।

ডিএনসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হোসেন ব্যবসায়ীদের দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছেন জানিয়ে মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘কাউন্সিলর একটি সময় দিয়েছেন। এখন দায়দায়িত্ব সব ব্যবসায়ীদের। দুই সপ্তাহ পরে আমরা সিলগালা করতে যাব। এর মধ্য যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, সব দায় বাজার কমিটির। অন্য কেউ দায় নেবে না।’

সিলগালা করতে না পারার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান মোতাকাব্বীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা যে ফেরত এসেছি, সিলগালা করতে পারিনি, এই পরিস্থিতি বিস্তারিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরে যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’