মহল্লার ঢোকার পথে পাহারা বসানো হয়েছে। এতে পোষা কুকুর নিয়ে বড়দের সঙ্গে অংশ নিয়েছে ছোটরাও। শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা, বৃহস্পতিবার রাতে
মহল্লার ঢোকার পথে পাহারা বসানো হয়েছে। এতে পোষা কুকুর নিয়ে বড়দের সঙ্গে অংশ নিয়েছে ছোটরাও। শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা, বৃহস্পতিবার রাতে

শ্যামলীতে রাত জেগে পাড়া-মহল্লায় পাহারা

রাত সোয়া একটার দিকে সহকর্মীর মোটরসাইকেল থেকে রাজধানীর শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড নামলাম। পথচারী সেতু পার হয়ে রাস্তার ওপার যেতে হবে। ভয়ে বুকটা দুরুদুরু করছিল। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির ঘটনা ঘটায় কিছুটা ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ ছিল না।

যাই হোক পথচারী সেতুর ওপর উঠলাম। চারপাশ এক ঝলক দেখে নিলাম। পলকে এক তরুণ চলে এল। খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু তাঁর গলায় আইডি কার্ড দেখে কিছুটা ভরসা পেলাম। বুঝতে পারলাম তিনি শিক্ষার্থী। লাঠি হাতে মহল্লায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। আমার সামনে সামনে তিনিও পথচারী সেতু পার হলেন।

শ্যামলী-২ নম্বর সড়কে ঢুকতেই দেখলাম গলিতে জটলা। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম। এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম, এত রাতে তাঁরা এখানে কী করছেন? জানালেন, এলাকাবাসী মিলে গলিতে পাহারা বসিয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নিজেরাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।

এখানে কথা হলো গার্মেন্টস এক্সেসরিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রিফাত জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাশের সড়কে বুধবার রাতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। তাই আজ রাতে নিজেদের গলিতে পাহারা জোরদার করেছি।’

রিফাত জামানের বাসা শাপলা হাউজিংয়ে। শ্যামলী-২ নম্বর সড়কে ঢুকে ভেতরে এক কিলোমিটারের মতো যেতে হয়। কিন্তু এখানে বন্ধুর বাসা থাকায় ঘুরে ঘুরে রাস্তায় টহল দিচ্ছেন। এই সড়কের প্রবেশমুখ থেকে ষাট ফিট পর্যন্ত মূল সড়ক ও অলি-গলিতে এলাকাবাসীরা মিলে পাহারা দিচ্ছেন।

মন্দিরের সুরক্ষায় পাহারা বসিয়েছেন স্থানীয়রা। শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা, বৃহস্পতিবার রাতে

রিফাত জামানের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে এগোতেই একদল তরুণের দেখা মিলল। তাঁরাও দল বেঁধে ঘুরে ঘুরে পাহারা দিচ্ছিলেন।

কিছু দূর এগোলে হাতের ডানে একটি মন্দির। মন্দিরের সামনে পাহারা দিতে দেখা গেল একদল মানুষকে।  গল্প করে তাঁরা সময় পার করছেন। কথা হলো তাঁদের সঙ্গে। জানলাম তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দা। মহল্লার নিরাপত্তা ও মন্দিরের সুরক্ষা দিতে পাহারা দিচ্ছেন।

এই দলে ছিলেন—এশরাক হোসেন, রেজোয়ানুল করিম, আনোয়ারুল ইসলাম, বাপ্পী আখন্দ, রিফাত, ইমন, শিশির, সিফাত, শান ও দিজুসহ আরও অনেকে।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দিরে হামলা হয়েছে। আমরা চাই না আমাদের এলাকায় এ রকম কিছু ঘটুক। তাই আমরা এখানে পাহারা দিচ্ছি।’

শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ভেতরে বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবারের বসবাস। সঞ্চিতা বর্মণ পরিবারের সঙ্গে এখানেই থাকে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের এই কর্মকর্তা জানালেন, তাঁর বাসায় পূজা-অর্চনা হয়। এ জন্য কিছু লোক এসে হুমকি দিয়ে গেছে, পূজার শব্দ ফটকের বাইরে গেলে বাসায় ভাঙচুর করা হবে। বিষয়টি এলাকার মুরুব্বিদের জানালে তাঁরা পাহারার ব্যবস্থা করেন। এতে তাঁরা নিরাপদ বোধ করছেন।