বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীম গত তিন বছরে চার দফায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে আছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে আছেন জি কে শামীম।
হাসপাতালে পাঠানোর কারণ হিসেবে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগের কথা বলা হয়।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকালে গ্রেপ্তার বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামীম গত তিন বছরে চার দফায় এক বছরের বেশি সময় হাসপাতালে আছেন। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট তাঁকে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের পুরোনো ভবনের তৃতীয় তলার কেবিন ব্লকের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে আছেন তিনি। দরজায় কড়া নাড়ার পর ভেতর থেকে দুজন কারারক্ষী বলেন, তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন। এ সময় তাঁকে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
অথচ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, স্ট্রোক থেকে শুরু করে ক্যানসার, হৃদ্রোগীরা আসন বা কেবিন না পেয়ে ওয়ার্ডের বাইরে, মেঝেতে, বারান্দায় কষ্ট করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কেন একজন আসামিকে বারবার হাসপাতালে আনা হচ্ছে, আমি বিষয়টির খোঁজ নেব।আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জি কে শামীমকে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানোর কারণ লেখা হয়েছে, ‘বুকে ও পেটে ব্যথা’, ‘উচ্চ রক্তচাপ’, ‘ডায়াবেটিস’সহ নানা রোগ।
জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারা চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নিউরোলজিসহ (স্নায়ুরোগ) বিভিন্ন সমস্যা আছে। তিনি ‘গুরুতর অসুস্থ’। তাই তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তাঁকে হাতের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শামীমের চিকিৎসা করছেন ইউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রদ্যুৎ কুমার সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ডায়াবেটিসের রোগী। তাঁর স্নায়ুরোগ, নিউমোনিয়া, চোখে সমস্যাসহ নানা রোগ আছে। পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলছে।
২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিজ কার্যালয়ে সাত দেহরক্ষীসহ জি কে শামীম গ্রেপ্তার হন। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল তাঁকে প্রথম বিএসএমএমইউতে পাঠানো হয়। তখন ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় আট মাস সেখানে ছিলেন তিনি। এ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তাঁকে কারাগারে ফেরত নেওয়া হয়।
পরে ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ মে পর্যন্ত ১ মাস ৫ দিন আবার শামীম বিএসএমএমইউতে ছিলেন। মাত্র দুই দিন পর আবার ২২ মে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। প্রায় ২ মাস ২৫ দিন পর ১৬ আগস্ট তাঁকে ফেরত নেওয়া হয়। এভাবে তিন দফায় ১১ মাস ১৪ দিন হাসপাতালের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে থেকেছেন। সর্বশেষ চতুর্থ দফায় তাঁকে ২৫ আগস্ট হাসপাতালে আনা হয়। ২৯ দিন ধরে বিএসএমএমইউ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আছেন তিনি।
কারা অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, জি কে শামীমকে হাসপাতালে পাঠাতে নিশ্চয়ই ‘উচ্চপর্যায়ের’ তদবির রয়েছে। এ ছাড়া তাঁকে বাইরের হাসপাতালে রাখার কথা নয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১০ হাজার বন্দীর মধ্যে তিনি কেন দুই দিন পরপর হাসপাতালে থাকার সুযোগ পাবেন?
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘এ তথ্য আমার জানা ছিল না। কেন একজন আসামিকে বারবার হাসপাতালে আনা হচ্ছে, আমি বিষয়টির খোঁজ নেব।’
গ্রেপ্তারের আগে জি কে শামীম কখনো নিজেকে যুবলীগের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক পরিচয় দিতেন। আবার কখনো পরিচয় দিতেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে।
চলতেন সামনে-পেছনে সাতজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বড় কাজের প্রায় সবই ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠানের কবজায়।
তাঁকে রাজধানীর নিকেতনের কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তারের সময় নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র, ৯ হাজার মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়।
গুলশান থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় জি কে শামীমসহ তাঁর সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে করা মামলায় ২৫ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।
গত ২৩ মে থেকে বিএসএমএমইউতে আছেন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য হাজি সেলিম। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি ইদ্রিস আলী ১ জুন থেকে আছেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে, বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি মিজানুর রহমান ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মেডিকেলে আছেন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি ও টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খানের ভাই সহিদুর রহমানকে প্রায় ছয় মাস পর সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়া হয়।
মানি লন্ডারিং মামলার আসামি সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন প্রায় চার মাস বিএসএমএমইউতে ছিলেন।