ঢাকার যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি

প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
ফাইল ছবি

সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা—স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্-বর্ষা এডিস মশা জরিপের ফলাফল দেখে এ কথাই মনে পড়ছে। জরিপ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব এলাকাতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। এর মধ্যে ৫৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীন গত ১৭ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত প্রাক্-বর্ষা জরিপ চালানো হয়েছে। ঢাকার দুই সিটির মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়িতে জরিপ পরিচালিত হয়। প্রাক্-বর্ষা এই জরিপের ফলাফল গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য ভবনের মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৮টি ওয়ার্ডে গেছেন জরিপকারীরা। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি এলাকা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডে জরিপ চালিয়ে ২৭টি ওয়ার্ডেই ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০০ ব্রুটো ইনডেক্স ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডটি বড় মগবাজার, দিলু রোড, নিউ ইস্কাটন রোড, পশ্চিম মগবাজার, মধ্য পেয়ারাবাগ, গ্রীনওয়ে, উত্তর নয়াটোলা নিয়ে গঠিত।

উত্তর সিটি এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৪০-এর বেশি পাওয়া গেছে আরও ৪টি ওয়ার্ডে। সেগুলো হলো ১৩, ৩০, ৩১ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এর মধ্যে বড়বাগ, মণিপুর, পীরেরবাগ ও শেওড়াপাড়া এলাকা নিয়ে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে মোহাম্মদপুরের বায়তুল আমান হাউজিং, পিসি কালচার হাউজিং, নবোদয় হাউজিং, শ্যামলী হাউজিং, উত্তর আদাবর, ঢাকা হাউজিং, রফিক হাউজিং, মুনসুরাবাদ, আদাবর ও শেখেরটেক এলাকা।  

৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে আসাদ অ্যাভিনিউ, রাজিয়া সুলতানা রোড়, তাজমহল রোড, শের–শাহ সুরী রোড, নুরজাহান রোড, জাকির হোসেন রোড, শাহাজাহান রোড, আওরঙ্গজেব রোড, আযম রোড ও কাজী নজরুল ইসলাম রোড। আর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডটি উত্তর বাড্ডার ময়নারটেক, মধ্যপাড়া, মোল্লা পাড়া, উত্তরবাড্ডা পূর্বপাড়া, বাওয়ালী পাড়া, মিছরী টোলা এবং উত্তরবাড্ডা হাজীপাড়া নিয়ে গঠিত।

এর বাইরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার যেসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি বলে জরিপে এসেছে সেগুলো হচ্ছে ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩৩ ও ৩৭।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৮টি ওয়ার্ডে জরিপ চালিয়ে ২৮টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ ব্রুটো ইনডেক্স ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডটি পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার, নওয়াবপুর রোড, হাজী ওসমান গনি রোড, নাজিরা বাজার লেন, কাজী আলাউদ্দীন রোড, ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন নিয়ে গঠিত।

দক্ষিণ সিটি এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৪০-এর বেশি পাওয়া গেছে আরও ৫টি ওয়ার্ডে। সেগুলো হলো ১৬, ১৮, ২২, ২৬ ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড। কাঁঠালবাগান, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, নর্থ রোড, সার্কুলার রোড, গ্রীন রোড, ওয়েস্ট স্ট্রিট, আল আমিন রোড, নর্থ সার্কুলার রোড ও ক্রিসেন্ট রোড এলাকা নিয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে নীলক্ষেত, আইয়ুব আলী কলোনি, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল, সেন্ট্রাল রোড, নায়েম রোড, টি.টি. কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল এলাকা, ঢাকা কলেজ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি স্টাফ কোয়ার্টার, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড, নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও বিডিআর পিলখানা।

জিগাতলার মনেশ্বর রোড, বোরহানপুর লেন, কাজীরবাগ লেন, নবীপুর লেন, হাজারীবাগ রোড, কালুনগর, এনায়েতগঞ্জ, গণকটুলী, নীলাম্বর সাহা রোড ও ভাগলপুর লেন নিয়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে আজিমপুর রোড, আজিমপুর এস্টেট, পলাশী ব্যারাক, ইডেন মহিলা কলেজ হোস্টেল স্টাফ কোয়ার্টার, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, বি.সি দাস স্ট্রিট, লালবাগ রোড ও ঢাকেশ্বরী রোড। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে ডিস্ট্রিলারি রোড, দীননাথ সেন রোড, ক্যাশাব ব্যানার্জী রোড, শশীভূষণ চ্যাটার্জী লেন, রজনী চৌধুরী রোড, সাবেক সরাফৎ গঞ্জ লেন ও সত্যেন্দ্র কুমার দাস রোড।

এর বাইরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার যেসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি বলে জরিপে এসেছে সেগুলো হচ্ছে ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৯, ২৩, ৩৩, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ ও ৫৬।  

এবার বছরের প্রথম ছয় মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সিটি করপোরেশনের জোরালো কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরবাসী সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নিতে পারে। আর আক্রান্ত বেশি হলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, জরিপে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এবার মশার ঘনত্ব ২০১৯-২০ সালের থেকে অনেক বেশি। এ বছর দেরিতে বর্ষা এসেছে, দেরিতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।