ঢাকা ঘিরে বিরক্তি, ক্ষোভ, যন্ত্রণা, উচ্ছ্বাসের চিত্রায়ণ

ধানমণ্ডির দ্বীপ গ্যালারিতে ‘অবচেতন শহরে’ প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন দর্শকেরা
ছবি: সংগৃহীত

থাই গ্লাস ঠেলে ভেতরে ঢুকলেই থমকে দাঁড়াতে হবে। ধানমন্ডির দ্বীপ গ্যালারির ভেতরটা ভরে আছে আবর্জনায়। সেসবের ভেতরে পড়ে আছে ফ্রেমবন্দী নানা আলোকচিত্র। ফ্রেমের কাচগুলো ভাঙা। একপাশে কয়লা আর চাঁছা কাঠের স্তূপ। প্রশ্ন জাগবে, গ্যালারি কি পরিত্যক্ত?

প্রদর্শনীতে দেখা যাবে এভাবে রয়েছে আবর্জনা, যা এই শহরের উন্নয়নের উচ্ছিষ্ট হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে

কিন্তু ভেতরে মানুষ আছে। আছেন শিল্পী, দর্শক। কোনো দেয়ালে সারি সারি আলোকচিত্র, কোনো দেয়ালে সার বেঁধে টাঙানো হয়েছে সংলাপ, যেগুলো দর্শককে ভাবিয়ে তুলবে। ‘আমার কিছু কিছু শিক্ষক আমার চেয়ে বেশি ক্লাস ফাঁকি দেয়!’—এ রকম সংলাপে চোখ আটকে যাবে।

দায়িত্বে অবহেলা–গাফিলতিতে কীভাবে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, তার পরিসংখ্যান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের ছাত্র আনন্দ অন্তঃলীন তাঁর চোখে ধরা পড়া নানা সময়ের ঢাকা শহরকে তুলে ধরেছেন আলোকচিত্রে। এই শহরে ধারাবাহিকভাবে ঘটছে উন্নয়ন। চাকচিক্যে ভরা বিলাসী জীবনের উচ্ছিষ্ট পড়ে থাকছে শহরের আনাচে–কানাচে। আর তার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরের সাধারণ মানুষকে। মুদ্রার এই উল্টো পিঠ আনন্দ তুলে ধরতে চেয়েছেন প্রদর্শনীতে আবর্জনাকে স্থান দিয়ে।

উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শনীতে ঢু মারেন ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন

শৌখিন আলোকচিত্রী আনন্দ জানান, সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ঢাকাকে নানাভাবে দেখেছেন তিনি। তাঁর সেই দেখার প্রতিফলন ‘অবচেতন শহরে’ শিরোনামে এই প্রদর্শনী। আনন্দ অবশ্য একে বলছেন ‘ডকু ফিকশন’।

এই প্রদর্শনীকে ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে আনন্দের বিরক্তি, ঘৃণা, ক্ষোভ, যন্ত্রণা, উচ্ছ্বাস, প্রশান্তির একটা চিত্রায়ণও বলা যায়। প্রদর্শনী নিয়ে আনন্দ অন্তঃলীন বললেন, ‘পুঁজিবাদী উন্নয়নের চাকচিক্যের বিপরীতে বাস্তবতা আমাদের সামনে ভিন্ন একটা চিত্র তুলে ধরে।

এ রকম নানা প্রশ্ন ও তার উত্তর কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভাবিয়ে তুলবে দর্শককে

যে বাস্তবতা শহরের প্রত্যেকটা মানুষের জন্য আলাদা।’ শহরটাকে আনন্দ যেভাবে দেখেন, সেভাবেই দেখাতে চেয়েছেন অন্যদের। গ্যালারির ভেতরে যেন এক টুকরা ঢাকা।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছে গত ১৯ আগস্ট। চলবে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে। ফিরে আসার পথে দর্শকের সামনে পড়বে একটি বস্তা। সেখানে প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য লিখে জমা দেওয়া যাবে।