ঢাকার আদালতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
১০ বছর আগে পুলিশের করা একটি মামলায় রোববার দেওয়া রায়ে বিএনপির মিরপুর এলাকার চারজন নেতার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন আসাদ কমিশনার, আঞ্জু কমিশনার, মতিউর রহমান ও রাশেদ হাসান।
এ নিয়ে ঢাকার আদালতে গত তিন মাসে ৩১টি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৫৪৫ জনের সাজা হলো। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের একাধিক মামলায়ও সাজা হয়েছে।
রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলাটির রায় দেন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দার।
মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ২০১৩ সালের ৭ মার্চ বেলা একটার দিকে মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় বিএনপি নেতারা হরতাল সফল করার জন্য ধানসিঁড়ি বহুমুখী সমবায় সমিতির অফিসে গোপন বৈঠক করেন। খবর পেয়ে মিরপুর থানা–পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল আরেফিনসহ পুলিশের লোকজন ওই সমিতির অফিসের সামনে আসেন। তখন পুলিশ কর্মকর্তারা সমিতির কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা বাধা দেন।
একের পর এক মামলায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। দণ্ডপ্রাপ্ত নেতা–কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আদালতের কাছ থেকে তাঁরা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না।কায়সার কামাল, আইনবিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি
পরে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে পুলিশের দুই কনস্টেবল আহত হন। মামলায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তাঁরা অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৪০ জন পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন। পরে ভেতরে তল্লাশি করে সাতটি বাঁশের লাঠি ও দুটি ককটেল উদ্ধার করা হয় বলে আদালতকে জানায় পুলিশ।
পুলিশ ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। আর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর। শেষ হয় গত ১০ অক্টোবর। ১৬ জন সাক্ষীর মধ্যে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দেন।
আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্কের শুনানি নিয়ে রোববার মামলাটির রায় দেন আদালত। রায়ে চারজনের প্রত্যেককে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের কেউই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, একের পর এক মামলায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। দণ্ডপ্রাপ্ত নেতা–কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আদালতের কাছ থেকে তাঁরা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। তিনি দাবি করেন, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন বাধাগ্রস্ত এবং নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য এমন সাজা হচ্ছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক দিনে ঢাকার পৃথক আদালতে পাঁচটি মামলার রায় হয়। এতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৭৯ নেতা-কর্মীর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিএনপির নেতাদের আইনজীবীরা জানান, বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা আরও বেশ কয়েকটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যে গতিতে বিচারকাজ চলছে, তাতে দ্রুত বেশ কয়েকটি মামলার নিষ্পত্তির সম্ভাবনা রয়েছে।