রাজধানীতে গত আট বছরের মধ্যে আজকের মতো গরম কখনো অনুভূত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩ এপ্রিল
রাজধানীতে গত আট বছরের মধ্যে আজকের মতো গরম কখনো অনুভূত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩ এপ্রিল

ঢাকায় আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম

চৈত্রের শেষে এ সময়ে যে হালকা বাতাস বইছে, তা লু হাওয়ার মতো গায়ে বিঁধছে। একেই হয়তো বলে ফোস্কা পড়া গরম। চারদিক দিয়ে যেন আগুনের হলকা বের হচ্ছে। রাজধানীতে গত আট বছরের মধ্যে আজকের মতো গরম কখনো অনুভূত হয়নি। বাতাসে আর্দ্রতা অস্বাভাবিক কম থাকায় গরমের সঙ্গে ঠোঁট ও চামড়া ফেটে যাচ্ছে। শরীরে অনুভূত হচ্ছে তীব্র জ্বালাপোড়ার।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা উঠেছিল ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল। আজকের সমান তাপমাত্রা এর আগে ২০২১ সালে আরেকবার উঠেছিল। তবে এবার বাতাসে আর্দ্রতা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম। তাই গরমের কারণে মানুষের কষ্ট ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।

সাধারণত কোনো এলাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করলে সেখানে মাঝারি দাবদাহ এবং ৪০ অতিক্রম করলে তীব্র দাবদাহ চলছে বলে ধরা হয়। ঢাকায় বর্তমানে তীব্র দাবদাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় গরমের তীব্রতা আগামীকাল শুক্রবার আরেক দফা বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে আর্দ্রতা পরিস্থিতির আপাতত কোনো উন্নতির সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্পের জোগান খুব বেশি বাড়বে না। ফলে গরমের সঙ্গে শরীর জ্বালাপোড়া এবং ঠোঁট ও চামড়া ফেটে যাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে। ১৭ এপ্রিলের আগে বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

এ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বছরের এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় স্থানভেদে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কম। আকাশে মেঘ সৃষ্টি ও ভেসে আসার সম্ভাবনাও কম। ফলে একদিকে তাপমাত্রা বাড়ছে, অন্যদিকে আর্দ্রতার কারণে কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি আরও তিন-চার দিন চলতে পারে।

এদিকে আবহাওয়াবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আকু ওয়েদারের হিসাবে, আজ বিকেল সোয়া চারটায় ঢাকার তাপমাত্রার পারদ চড়েছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কিন্তু মানুষের শরীরে এর অনুভূতি ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা দেড়টায় ঢাকার তাপমাত্রা যখন সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল, তখন ঢাকাবাসীর শরীরে তা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভূত হয়েছে। আর ঢাকার আর্দ্রতা এই সময়ে যেখানে থাকার কথা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ, সেখানে আজ বিকেল সাড়ে চারটায় তা ১৭ শতাংশ নেমে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত ঢাকায় জলাভূমি কমে যাওয়া এবং গাছপালা কম থাকায় গরমের অনুভূতি প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। সেখানে ঢাকা শহরের অন্যান্য স্থানের তুলনায় জলাভূমি ও গাছপালা বেশি। ফলে ঢাকার যেকোনো স্থানের তুলনায় সেখানে কম তাপমাত্রা অনুভূত হয়। কিন্তু আগারগাঁওয়ের কাছে ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারের তাপমাত্রা সেখানকার চেয়ে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালে ঢাকা শহরের ৬৫ শতাংশ কংক্রিট বা অবকাঠামোতে আচ্ছাদিত ছিল। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় প্রায় ৮২ শতাংশ। এই সময়ে জলাশয় ও খোলা জায়গা প্রায় ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে। যে কারণে ঢাকার তাপমাত্রা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি থাকছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা শহরের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে এত গরম হওয়ার কথা নয়। কারণ, এখানে ছয়টি নদী, শতাধিক খাল ও অসংখ্যা জলাশয় ছিল। ফলে তাপমাত্রা বেশি হলে এখানে অভ্যন্তরীণভাবে জলীয় বাষ্প তৈরি হয়ে মেঘ সৃষ্টি হতো। প্রাকৃতিক উপায়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হতো। কিন্তু সব জলাভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এখন শহরে ভবনের ভেতর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে তাপমাত্রা কমানো যাচ্ছে না। এসি ব্যবহারের ফলে তাপমাত্রা আরও বাড়ছে।