বই দেখছেন পাঠকেরা। সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা’-এর উদ্বোধনী দিনে। গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
বই দেখছেন পাঠকেরা। সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা’-এর উদ্বোধনী দিনে। গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

শুরু হলো সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা

গুলশান-বনানী এলাকার পাঠকদের হাতের নাগালে বইয়ের সম্ভার

রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে গুলশান-বনানীর খ্যাতি থাকলেও সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনো বইয়ের দোকান নেই। বই কিনতে হলে সেখানকার বাসিন্দাদের আসতে হয় শাহবাগ-নিউমার্কেট এলাকায়। মহান বিজয়ের মাসের শুরু থেকে এসব এলাকার পাঠকদের হাতের নাগালে বই নিয়ে আসা হয়েছে।

আজ রোববার থেকে ২৮ গুলশান অ্যাভিনিউয়ে সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ‘সিটি ব্যাংক সেন্টার’–এ শুরু হয়েছে ‘সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা’। সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার এবং প্রথমা প্রকাশনের প্রকাশক ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ফিতা কেটে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পাশে ছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কথাসাহিত্যিক মাসরুর আরেফিন।

সিটি ব্যাংক সেন্টারের নিচতলার খোলামেলা পরিসরের এক পাশে বইয়ের র‌্যাক ও টেবিল সাজিয়ে সুদৃশ্য স্টলের আদলে তৈরি করা হয়েছে নানা ধরনের বইয়ের প্রদর্শনী। পাঠকেরা এখান থেকে তাঁদের পছন্দের বইটি বেছে নিতে পারবেন। প্রথমা প্রকাশনের বইসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রকাশনীর বাংলা ও ইংরেজি ভাষার নানা বই এখানে রয়েছে। সৃজনশীল সাহিত্য থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, গবেষণা, ভ্রমণ, অনুবাদের বৈচিত্র্যময় গ্রন্থ সম্ভার নিয়ে সাজানো হয়েছে এ বইমেলা।

সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা’য় একটি বই নিয়ে কথা বলছেন দুজন। গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানালেন, প্রথমার বইতে ২৫ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশনে বই কিনতে পারবেন পাঠকেরা। দেশের অন্যান্য প্রকাশনীর বইয়ে থাকছে ২৫ ও বিদেশি প্রকাশনীর বইয়ে ৫ শতাংশ কমিশন। এই মেলা সবার জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। চলবে আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।

সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার এবং প্রথমা প্রকাশনের প্রকাশক ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ফিতা কেটে ‘সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা’–এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সিটি ব্যাংক সেন্টার, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

বইয়ের প্রদর্শনীর স্থানটির সামনেই রয়েছে কফিশপ। সেখানে চা-কফির পাশাপাশি হালকা খাবারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তাই বই কিনতে এসে এই মৃদু শীতের দিনে উষ্ণ পানীয়ে চুমুক দিয়ে গলা ভেজাতে পারবেন পাঠকেরা।

‘সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন। সিটি ব্যাংক সেন্টার, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

বইমেলার সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বললেন, সিটি ব্যাংক দেশে সুনামের সঙ্গে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করছে। অন্যদিকে প্রথমা প্রকাশনও একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করে প্রকাশনাজগতে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। তাদের ও অন্য প্রকাশনীর বই নিয়ে এই মেলার আয়োজন খুবই আনন্দময় উদ্যোগ। গুলশান, বনানী, বারিধারা ও আশপাশের এলাকার পাঠকেরা এখান থেকে বই কিনতে পারবেন। তাঁদের দূরে যাওয়ার ঝামেলায় পড়তে হবে না।

‘সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা’–এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার। সিটি ব্যাংক সেন্টার, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় এ বইমেলা করা সম্ভব হচ্ছে। এর আগে সরকার অনেক রকম চাপ প্রয়োগ করত। প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এমনকি প্রথমা প্রকাশন থেকে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বই প্রকাশ হওয়ার জন্যও মন্ত্রীদের বকাঝকা শুনতে হয়েছে। তবে প্রথম আলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়নি। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে এবং বইমেলার মতো একটি নতুন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা গেল। আশা করি, পাঠকের কাছে এই মেলা সমাদৃত হবে।’

‘সিটি ব্যাংক-প্রথমা বইমেলা’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রথমা প্রকাশনের প্রকাশক ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। সিটি ব্যাংক সেন্টার, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বইমেলা আয়োজনের জন্য সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে প্রথমা প্রকাশনের কার্যক্রম শুরু হয়। এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ৮৯০টি বই প্রকাশিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৫৭তম সংস্করণ হয়েছে ‘একাত্তরের চিঠি’ বইটির। এ ছাড়া অনেকগুলো সংস্করণ হয়েছে এমন বইয়ের সংখ্যাও তিন শতাধিক। এ থেকে বোঝা যায়, প্রথমার বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ ও আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিজয়ের মাসে এই বইমেলার মাধ্যমে পাঠকের নাগালে ভালো বইয়ের সম্ভার পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ব্যবস্থাপক আশানূর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রথমা প্রকাশন ও সিটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।