একটি খামার করতে যেসব অনুমতির প্রয়োজন, এর কিছুই না থাকায় আজ শনিবার আরেক দফা অভিযান চালিয়ে সাতমসজিদ হাউজিংয়ের সাদিক অ্যাগ্রোর পুরো খামার ভেঙে দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার সাতমসজিদ হাউজিংয়ের ১ নম্বর সড়কের শেষ প্রান্তে থাকা সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটি ছিল একেবারে রামচন্দ্রপুর খালের পাড় ঘেঁষে। অথচ খালের প্লাবন ভূমির (ফোরশোর) ৩০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করতে উচ্চ আদালতের আদেশ রয়েছে। এ ছাড়া স্থাপনা নির্মাণের জন্য (খামার) সাদিক অ্যাগ্রোর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতিও ছিল না। খামারের জন্য সিটি করপোরেশনের থেকেও নেওয়া হয়নি কোনো ট্রেড লাইসেন্স।
অভিযান পরিচালনা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-ও-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন (বৃহস্পতিবার) আংশিক ভেঙে দিয়ে তাদের ট্রেড লাইসেন্স, ফার্মের স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি—এসব চাওয়া হয়েছিল। তারা সেদিন এসবের কিছুই দিতে পারেনি। সেদিন তারা নিজেরাই ভেঙে দেবে বলে দুই দিন সময় নিয়েছিল। আজ গিয়ে দেখা যায়, ভাঙেনি, তাই বাকিটাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় কোনো খামার করার সুযোগ নেই বলেও তিনি জানান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবারের চালানো অভিযানে খামারটির অবৈধ অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে নবীনগর হাউজিংয়ে সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩৩ শতক (এক বিঘা) জমি দখল করে গড়ে তোলা সাদিক অ্যাগ্রোর আরেকটি খামারের পুরোটা ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় অভিযান শুরুর কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে এটি বিলম্বিত হয়। পরে দুপুর ১২টায় উচ্ছেদ শুরু হয়। তৃতীয় দিনের অভিযানে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটি ছাড়াও আরও ৯টি অবৈধ পাকা স্থাপনা, একটি হাউজিংয়ের ফটক ও আশপাশের কিছু ছোট স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।
এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার থেকে উদ্ধারকৃত খালের জায়গা পুনরায় দখল হওয়া ঠেকাতে খনন করা শুরু হয়েছে। আজ পর্যন্ত গত দুই দিনে রামচন্দ্রপুর খাল থেকে ১০ টন বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়েছে। আর তিন দিনের অভিযানে ৭০টির বেশি স্থাপনা ভেঙে প্রায় ২০ বিঘা জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে।
কোরবানির জন্য এই সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়েছিলেন এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল আলোচনা হয়। এরপর মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে। মতিউরকে এরই মধ্যে এনবিআর থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তাঁর অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।