ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় স্নাতক চতুর্থ বর্ষের কিছু ছাত্রীকে আবাসিক হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ওরফে রীভা। ওই হুমকির একটি অডিও রেকর্ড গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। এবার সেই অডিও ভাইরাল (ছড়িয়ে দেওয়া) করার বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ে দুই ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতন করেছেন তামান্না।
নির্যাতনের একপর্যায়ে কথামতো স্বীকারোক্তি না দিলে তাঁদের বিবস্ত্র করে সেই ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল (ছড়িয়ে দেওয়া) করার হুমকি দিয়েছেন তামান্না জেসমিন। গতকাল মঙ্গলবার ইডেন কলেজের রাজিয়া বেগম ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষে সাড়ে ছয় ঘণ্টা নির্যাতনের পর ওই দুই ছাত্রী তামান্নার কথামতো স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন৷ খবর পেয়ে ছাত্রীনিবাসটির প্রাধ্যক্ষ নারগিস রুমা ওই কক্ষে গিয়ে দুই ছাত্রীকে উদ্ধার করেন।
উদ্ধারের পর ইডেন কলেজের শিক্ষক ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী ওই দুই ছাত্রীর মুখ থেকে ঘটনা শোনেন৷ সেই মুহূর্তের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রথম আলোর হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেত্রীরা দুই ছাত্রীকে নানা ধরনের আশ্বাস দিয়ে ঘটনা শোনার চেষ্টা করছেন।
একপর্যায়ে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, আগে যে অডিও ফাঁস হয়েছিল, তার ভিত্তিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা বলে তাঁদের কাছে স্বীকারোক্তি চেয়েছেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন। তামান্না আরও স্বীকারোক্তি দাবি করেন, অডিও রেকর্ডটি তাঁরা (দুই ছাত্রী) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুমনা মীমের নির্দেশে করেছিলেন। এসব স্বীকোরোক্তি না দিলে তাঁদের বিবস্ত্র করে সেই ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেন তামান্না। তখন বাধ্য হয়েই তামান্নার লিখে দেওয়া স্বীকারোক্তিটি তাঁরা পড়েন। তামান্না ও তাঁর সহযোগীরা তা মুঠোফোনে ধারণ করেন।
ওই ছাত্রী আরও বলেন, তামান্না জেসমিন তাঁদের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করেন। অসুস্থ থাকলেও ছাড় নেই। দীর্ঘদিন ধরেই এই নিপীড়ন চলে আসছে। সম্প্রতি প্রমাণ রাখার জন্য তাঁরা হুমকি ও গালিগালাজের অডিও রেকর্ড করেন। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুমনা মীম তাঁকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ দেননি।
ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী অন্য ছাত্রী শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেত্রীদের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এই ভিডিও বাইরে চলে গেলে আমার নিরাপত্তা কে দেবে?’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহান খান প্রথম আলোকে বলেন, ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির যে অডিও ভাইরাল হয়েছিল, সেটা দুঃখজনক। ওই অডিওর নেতিবাচক কথোপকথনের জন্য তিনি নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও ছাত্রীদের একটি কক্ষে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন করে বিবস্ত্র করার হুমকির একটি তথ্য সামনে এসেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
সোহান খান বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য সংগঠন কলঙ্কিত হতে পারে না। অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সতর্ক না হয়ে তিনি যেভাবে উগ্রতা দেখিয়েছেন, এটি সত্য হয়ে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবেন বলে আশা করি৷’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিনের মুঠোফোনে একাধিক কল করেও সাড়া মেলেনি।
কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।