রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আড়তে খুচরায় পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বিক্রি করেন সালাম মিয়া। গতকাল বুধবার রাত সোয়া আটটার দিকে তাঁর দোকানে গিয়ে দেখা যায়, দুই ধরনের দেশি পেঁয়াজ (পাবনা ও ফরিদপুরের) বিক্রি করছেন। পাবনারটা প্রতি কেজি ৯০ টাকা এবং ফরিদপুরেরটা ৮০ টাকা বলে জানালেন। এ ছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৭০ টাকায়।
সালাম মিয়ার দোকানে মাঝারি আকারের ভারতীয় একটি পেঁয়াজের ওজন নিয়ে দেখা গেল, ৭৫ গ্রামের কিছু বেশি। প্রতি কেজি ৭০ টাকা হিসাবে ওই ৭৫ গ্রাম ওজনের পেঁয়াজের দাম হয় ৫ টাকা ২৫ পয়সা। পরে পাবনার আরেকটি মাঝারি আকারের পেঁয়াজের ওজন হলো ৩৭ গ্রাম। কেজি ৯০ টাকা দরে এই পেঁয়াজের দাম পড়ল ৩ টাকা ৩৩ পয়সা।
মসলাজাতীয় খাদ্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত সম্প্রতি পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এদিকে দেশে চাষিদের হাতে থাকা পেঁয়াজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্রেতাদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে জানিয়ে সালাম মিয়া বলেন, ‘কাস্টমার খালি জিগায়, দাম বেশি কেন? আমরা খুচরা বেচি। দাম বাড়া-কমার কারণ কেমনে কই? যহন যে দামে কিনি, এর থেকে কয়েক টাকা লাভ রাইখা বেচি।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছর আগস্টের শেষ সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। তখন ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪০-৪৫ টাকা কেজি।
মসলাজাতীয় খাদ্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত সম্প্রতি পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এদিকে দেশে চাষিদের হাতে থাকা পেঁয়াজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
ডিম আর পেঁয়াজের দরদামের খোঁজ নিতে যাওয়া হয় ডাবের দোকানে। ডেঙ্গুর এই মৌসুমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিটি ডাব ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুধু পেঁয়াজই নয়, বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যের এখন বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। সালামের দোকান থেকে বের হয়ে একটু যেতেই মুরগির পাইকারি বাজারের সামনে রাস্তার পাশে ডিম বিক্রি করছিলেন হোসাইন আলী। গতকাল প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম তিনি ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। জানালেন, বর্তমানে সাদা ও লাল রঙের ফার্মের ডিমের দামে তফাত নেই। যদিও আগে সাদা ডিম হালিতে ৪-৫ টাকা কম ছিল।
হোসাইন আলী যে দামে বিক্রি করছিলেন, তাতে প্রতিটি ডিমের দাম হয় সাড়ে ১২ টাকা। এই বিক্রেতা বললেন, আড়ত থেকেই ১০০ ডিম ১ হাজার ১৬০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। অর্থাৎ প্রতিটি ডিম আড়তেই বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা ৬০ পয়সায়।
ফার্মের ডিম, সোনালিকা মুরগি, ব্রয়লার ও লেয়ার (ডিম পাড়ার) মুরগি এবং মুরগির বাচ্চার দাম উল্লেখ করে প্রতিদিন নিজেদের ফেসবুক পেজে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ’। গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে সেখানে যে তথ্য দেওয়া হয় তাতে দেখা যায়, গাজীপুর এলাকার খামারগুলো থেকে ফার্মের প্রতিটি লাল ডিম ১১ টাকা ২০ পয়সা এবং সাদা ডিম ১০ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
চলতি আগস্টের শুরুর দিকে বাজারে যখন ডিমের হালি ৫৫ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল, সে সময় ১১ আগস্ট একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। তাতে বলা হয়, ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ প্রান্তিক পর্যায়ের বেশির ভাগ ছোট খামার বন্ধ হয়ে যাওয়া। এ কারণে সরবরাহ-ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় সরকারি তদারকি না থাকায় পোলট্রি শিল্পে তাদের আধিপত্য বেড়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। টিসিবির তথ্যমতে, গত বছর এ সময় ডিমের হালি ছিল ৪০ টাকার মতো।
ডিম আর পেঁয়াজের দরদামের খোঁজ নিতে যাওয়া হয় ডাবের দোকানে। ডেঙ্গুর এই মৌসুমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিটি ডাব ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের যে পাশে হোসাইন আলী ডিম বিক্রি করছিলেন, তাঁর বিপরীতেই ডাব বিক্রি করেন রহিম মিয়া। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর ভাসমান দোকানে ছোট আকারের ও প্রায় নারকেল হয়ে যাওয়া কিছু ডাব ছিল। তিনি সেগুলো ৬০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। রহিম মিয়া জানান, দিনের বেলা মাঝারি আকারের ও ভালো মানের ডাব ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
ডাবের দাম নিয়ন্ত্রণে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের আগে যে ডাব ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল, সেটা অভিযানের পর বিক্রি হয় ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাবে, ২০২০ সালেও একটি ডাব গড়ে ৭৪ টাকায় বিক্রি হয়।