বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৩৪ সালের এই দিনে তাঁর জন্ম হয়। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি আজীবন সম্মাননা পদক’ প্রদানের মধ্য দিয়ে তাঁর জন্মদিন উদযাপন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও তাহেরা চৌধুরী স্মৃতি সংসদ’। এবার আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় বিশিষ্ট শিল্পী রফিকুন নবীকে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল বয়সভিত্তিক চারটি বিভাগে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংসদ রাশেদ খান মেনন। তিনি স্মৃতিচারণা করে বলেন, সেই ষাটের দশকে যখন তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন করতেন, তখন পোস্টার–ফেস্টুন আঁকা, সংকলনের প্রচ্ছদ, সভামঞ্চের সেটের অলঙ্করণসহ বিভিন্ন কাজে তাঁরা নিয়মিতই কাইয়ুম চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তীর মতো শিল্পীদের কাছে যেতেন। তাঁরা সব সময় সাগ্রহ এসব কাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, শিল্পী হিসেবে কাইয়ুম চৌধুরী যেমন ছিলেন বড় মাপের, তেমনি রাষ্ট্র ও সমাজের অসংগতিকে তিনি রং-তুলিতে তুলে ধরেছেন। প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন।
বিশেষ অতিথি আরও বলেন, শিল্পী রফিকুন নবীও একইভাবে সমাজের অসংগতিকে তাঁর শিল্পচর্চার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বিশেষত ছিন্নমূল শিশুদের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর সৃষ্টি করা ‘টোকাই’ চরিত্রটি কালজয়ী। এই টোকাই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সমাজে বিদ্যমান বহু অনিয়ম, অন্যায়, শোষণ-বঞ্চনাকে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই কাইয়ুম চৌধুরীর জন্মদিনে রফিকুন নবীকে আজীবন সম্মাননা জানানো খুবই সংগত ও তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে।
সম্মাননা প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, কাইয়ুম চৌধুরীকে তিনি প্রথমে পেয়েছেন শিক্ষক হিসেবে, তারপর দীর্ঘদিন ছিলেন সহকর্মী। এর বাইরেও রাজনীতি, শিল্প–সংস্কৃতির আন্দোলনসহ বহু বিষয়ে তাঁরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। কাইয়ুম চৌধুরী জাতির শিল্পরুচি তৈরির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন, তাঁর কাছে বহু কিছু শিখেছেন। অনুকরণীয় ছিলেন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয়ভাবে তাঁকে নিয়ে একটি বড় আয়োজন এখনো হলো না, এটা বড়ই দুঃখজনক।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিচারকমণ্ডলীর সদস্য শিল্পী সৈয়দ আবুল বারক আলভী ও আবদুল মান্নান।
পরে বিশেষ অতিথি রাশেদ খান মেনন শিল্পী রফিকুন নবীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং তাঁর হাতে ক্রেস্ট, মানপত্র ও উপহার তুলে দেন। তাঁরা দুজনই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে সনদ ও পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি বদিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক হাসান উজ জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শর্ব্বরী রায় চৌধুরী।