পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দুই কিলোমিটার সড়কে আঁকা হয়েছে আলপনা। দৃষ্টিনন্দন এ আলপনার সঙ্গে ছবি তুলতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন মানুষজন। কেউ রাস্তায় বসে ছবি তুলছেন, কেউবা সেলফি তুলে স্মৃতিবন্দী করে রাখছেন। আজ রোববার দুপুরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শুরু হয় আলপনা আঁকা। শেষ হয় সকাল ছয়টার দিকে। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এই আলপনা আঁকায় অংশ নিয়েছেন ৩০০ শিল্পী। এ উপলক্ষে সেখানে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ আয়োজক সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এখনো ঈদের ছুটি চলছে। তাই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে যানবাহনের তেমন একটা চাপ নেই। এরপরও ব্যক্তিগত অনেক যানবাহন এই পথ দিয়ে চলাচল করছে। এমন পরিস্থিতেও রাস্তায় এক পাশে দাঁড়িয়ে অনেকেই আলপনার সঙ্গে ছবি তুলছেন। কেউ সড়কে বসে, কেউবা পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।
সেখানে কথা হয় মিজানুর রহমান ও তানিসা রহমান নামের এক দম্পতির সঙ্গে। পাঁচ বছর বয়সী ছেলে আইয়ান ও আড়াই বছর বয়সী মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এসেছেন তাঁরা। এই দম্পতি বলেন, বাঙালির অন্যতম উৎসব পয়লা বৈশাখ। এই উৎসবে সন্তানদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতেই তাঁরা এখানে এসেছেন।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ঘোরাঘুরি জন্য অনেকেই ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এসেছেন। বাঙালির ঐতিহ্যের এই বাহনে অনেকেই সড়কের এক পাশ থেকে আরেক পাশ ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে সময়টা উপভোগ করছেন। ঘোড়ার গাড়ির চালক খায়রুল আলম বলেন, তিনি বেলা ১১টার দিকে এসেছেন। মানুষজন ঘোড়ার গাড়িতে উঠছেন। তবে বিকেলের দিকে ভিড় আরও বেশি হবে।
গ্রামবাংলার নিত্য ব্যবহার্য পণ্যও বিক্রি হচ্ছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। আবদুল কাদের নামের একজন ব্যবসায়ী হাতে কুলা, ঝুঁড়ি, ডালাসহ কয়েকটি পণ্য নিয়ে ঘুরছেন। বিক্রি কেমন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই শখ করে কিনছেন। এগুলো তো আর ঢাকার মানুষ ব্যবহার করেন না।
এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ও বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আলপনা আঁকা হয়েছে। ঢাকার বাইরে আরও দুটি স্থানেও আলপনা এঁকেছে তারা। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’।
এটিকে দেশের সর্ববৃহৎ আলপনা উৎসব হিসেবেও উল্লেখ করেছেন আয়োজকেরা। তাঁরা বলছেন, আলপনা আঁকার কাজ গত শুক্রবার প্রথমে শুরু হয় কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে। মিঠামইনের জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়ক আলপনায় রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনার রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খুলনার শিববাড়ী মোড়েও আলপনা আঁকা হয়েছে।
পয়লা বৈশাখ আয়োজনে ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ দেশের নানা প্রান্তে ‘আলপনায় বৈশাখ’ শীর্ষক আলপনা অঙ্কনের আয়োজন করে আসছে। করোনা মহামারির কারণে গত কয়েক বছর এই আয়োজন বন্ধ ছিল। অবশেষে অষ্টমবারের মতো এ বছর আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।