রাজধানীতে গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ শতাংশই শিক্ষার্থী।
দেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে শুধু রাজধানী ঢাকার হিসাব বিবেচনায় নিলে এই হার ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছর রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা গেছেন, তার ৪০ শতাংশই ছিলেন শিক্ষার্থী। অন্যভাবে বলা যায়, সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী মৃত্যুর যে হার, তার চেয়েও আড়াই গুণ (মৃত্যু) বেশি রাজধানীতে।
এর আগের বছরের চিত্রটিও প্রায় একই রকমের। ২০২২ সালে সারা দেশে দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ১৬ শতাংশ ছিলেন শিক্ষার্থী। রাজধানীর ক্ষেত্রে যা ছিল সাড়ে ৩৯ শতাংশ। অথচ সড়ক দুর্ঘটনা কমানো নিয়ে যত আলোচনা, উদ্যোগ, পরামর্শ, সুপারিশ ও তর্ক-বিতর্ক—এর প্রায় সবই রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগও মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। এরপরও রাজধানীতে কেন সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনা আগের চেয়ে বেড়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পরিবহনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে সড়ক নিরাপদ করার কথা সরকার মুখে যেভাবে বলছে, বাস্তবে সে রকম কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের চলাচল বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই সড়কের বিদ্যমান অব্যবস্থাপনার শিকার তাঁরাই বেশি হচ্ছেন।
সাড়ে পাঁচ বছর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশকাঁপানো আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে সরকারের দিক থেকে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে বাস্তবতা ভিন্ন, কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে ৬৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬২৬ জন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীই ২৫১ জন। অর্থাৎ গত তিন বছরে রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৪০ শতাংশই শিক্ষার্থী।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের চলাচল বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই সড়কের বিদ্যমান অব্যবস্থাপনার শিকার তাঁরাই বেশি হচ্ছেন। আবার সড়কে শৃঙ্খলা মানার ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে রাজধানীতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, বিমানবন্দর সড়ক, হানিফ ফ্লাইওভার ও বাড্ডা-কুড়িল সড়ক সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। এসব এলাকায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি।
গত জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সাতটি সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে প্রথম আলো। এসব দুর্ঘটনায় নয়জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সাতজনই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মারা যায় মাদ্রাসার তিন শিক্ষার্থী। তাদের বয়স ছিল ১৫-১৬ বছর। তাদের একজন বাবার মোটরসাইকেলে দুই বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল। বেপরোয়া গতির কারণে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ৫ মে বিমানবন্দর গোলচত্বর এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মৃত্যু হয় এক কলেজছাত্রের।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, বিমানবন্দর সড়ক, হানিফ ফ্লাইওভার ও বাড্ডা-কুড়িল সড়ক সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। এসব এলাকায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি।
রাজধানীতে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বেড়েছে
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় মারা যান শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম (মীম) ও আবদুল করিম (রাজীব)। এই ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তখন সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রতিশ্রুতি পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করে রাজপথ ছেড়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সরকার সড়ক পরিবহন আইন পাস করে। তবে শুরু থেকেই এই আইনের কয়েকটি ধারার বিরোধিতা করে আসছিল সড়ক পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। যে কারণে আইনটি পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপের মুখে সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারায় সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শেষ পর্যন্ত গত ১৩ মার্চ মন্ত্রিসভায় ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধন করে বিদ্যমান আইনের অন্তত ১২টি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি ধারা অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরিবহনমালিকদের একচেটিয়া প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের গাফিলতি থাকলে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান
তবে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে আসছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, আইনে সংশোধন এনে শাস্তি কমানোর পেছনে সরকারের ওপর রাজনৈতিক মদদপুষ্ট মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রভাব রয়েছে। যেখানে জরিমানা ও শাস্তির বিধান যৌক্তিকভাবে বাড়ানো প্রয়োজন ছিল, সেখানে সংশোধনীর মাধ্যমে শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়াবে। এর ফলে সড়কে অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈরাজ্য আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত মর্মান্তিক মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের চাপে সড়ক পরিবহন আইনটিকে ‘নখদন্তহীন’ করা হয়েছে বলে মনে করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহনমালিকদের একচেটিয়া প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের গাফিলতি থাকলে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে সড়কে শৃঙ্খলাও ফেরেনি। প্রত্যাশা ছিল, যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হবে। কিন্তু বিশেষ মহলের চাপে এই আইন এখন হয়ে যাচ্ছে ‘সমঝোতার দলিল’।বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান
নিরাপদ সড়কের দাবিতে দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত হন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান। তখন টানা কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে আবার আশ্বাস পেয়ে ঘরে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। কিন্তু রাজধানীর সড়ক নিরাপদ হয়নি। রাজধানীর বাইরেও একই পরিস্থিতি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত চার মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৪৭ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ গত চার মাসে দিনে গড়ে তিনজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে সড়কে। অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে রাজধানীতে ১২৪টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৯৩ জন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ২৭ জন। এর আগে ২০২৩ সালে রাজধানীতে ২৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৪৩ জন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ১০১ জন। রাস্তা পার হতে গিয়ে ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনা বেশি। আবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিশোর ও তরুণ বয়সীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
তিন বছর ধরে রাজধানীতে ধারাবাহিকভাবে দুর্ঘটনা বেড়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে রাজধানীতে ১৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৩৭ জন। ২০২২ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা ২৫৯। মারা গেছেন ২৪৬ জন। ২০২৩ সালে রাজধানীতে ২৯৭টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৪৩ জনের।
নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই
২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি ১৭টি নির্দেশনা দিয়েছিল। এসব নির্দেশনার বেশির ভাগ সড়কের শৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। কিন্তু এগুলো কাগজে-কলমেই আটকে আছে, বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় ঢাকা শহরের ১৪০টি বাসস্টপেজ চিহ্নিত এবং সুসজ্জিত করা, নির্ধারিত স্টপেজে বাস থামা এবং যাত্রী ওঠা-নামা নিশ্চিত করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বাস থেকে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।
ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। ট্রাফিক সদস্যরা হাত দিয়েই যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। কোনো ধরনের সংকেতবাতি এখন আর ঢাকায় কাজ করে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা ছিল রাজধানীতে অটোমেটিক সিগন্যাল-পদ্ধতি চালু করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া নির্দেশনার একটিতে বলা হয়, গণপরিবহনে দৃশ্যমান দুটি জায়গায় চালক ও চালকের সহকারীর ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর এবং মুঠোফোন নম্বর প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার ভেতরে চলাচলকারী কোনো বাসেই চালকের লাইসেন্স ও মুঠোফোন নম্বর প্রদর্শন করা হয় না।
পদচারী-সেতুগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বাতি ও সিসিটিভি স্থাপন, ফুটপাত হকারমুক্ত করা, সড়কে চলাচলকারী পরিবহনে চালক ও যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করার মতো নির্দেশনাও ছিল। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যত অগ্রগতি নেই।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। যে কারণে সড়কে শৃঙ্খলাও ফেরেনি। প্রত্যাশা ছিল, যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হবে। কিন্তু বিশেষ মহলের চাপে এই আইন এখন হয়ে যাচ্ছে ‘সমঝোতার দলিল’।
আর কত মা-বাবার বুক খালি হবে
সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) প্রথমবারের মতো সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক তথ্য প্রকাশ করে গত জানুয়ারি মাসে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর (২০২৩ সাল) দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৯৫টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫ হাজার ২৪ জন।
তবে সড়কে মৃত্যুর সরকারি এই হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি সংগঠনগুলোর তথ্যের পার্থক্য রয়েছে। যেমন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৯১১টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬ হাজার ৫২৪ জন।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অবশ্য প্রতিবেদনটিতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ২০২১ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাব্য সংখ্যা ৩১ হাজার ৫৭৮।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) বলছে, দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তিরাই সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাঁদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক যে ক্ষতি হচ্ছে, তার একটি হিসাব গত বছর প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এআরআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, তিন বছরে (২০১৯-২১ সাল) সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে নিরাপদ সড়কের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়নে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী নয়। দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো মা-বাবা সন্তান হারাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
সড়ক দুর্ঘটনায় সন্তান হারিয়েছেন বাসচালক জাহাঙ্গীর আলম। বাসচাপায় তাঁর মেয়ে দিয়া খানমের মৃত্যুর পর সাড়ে পাঁচ বছর আগে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন।
ওই দুর্ঘটনার পর বাসচালকের পেশা ছেড়ে দেওয়া জাহাঙ্গীর আলম এখন মুদিদোকানি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তায় নামলে কেউ আইন মানতে চান না। সরকার যদি ঠিকমতো ব্যবস্থা নিত, তাহলে চালকসহ সবার মনে ভয় থাকত। কারও মনে ভয় নেই, সড়কে নিরাপত্তাও নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় যাঁরা ছেলে বা মেয়েকে হারিয়েছেন, তাঁরাই শুধু এই কষ্টটা বোঝেন।