ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে মেঝেতে বসে অনবরত কাঁদছেন সেলিনা বেগম। তাঁর ছেলে জাহান সরদার (১৯) রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। কলেজপড়ুয়া জাহান বিস্ফোরণের সময় সামনের সড়কে বাসের যাত্রী ছিলেন।
সেলিনা বেগমের ছেলে জাহানের শরীরের একপাশ ঝলসে গেছে। মাথায়ও জখম হয়েছে। জাহানদের বাড়ি নবাবগঞ্জে। সেখান থেকে দুলাভাই মো. মানিকের কুতুবখালীর বাসায় যাচ্ছিলেন জাহান। মানিক বলেন, জাহান কলেজে পড়ে। বাসে করে ফিরছিল। বাসের প্রায় সব যাত্রীই এমন ঝলসে গেছে।
বিস্ফোরণে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কয়েক শ মানুষ ভিড় করেছেন। কেউ স্বজনের খোঁজ পেলেও দেখতে পারেননি। তাঁদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে স্যানিটারি সামগ্রী সরবরাহ করতে গিয়েছিল সাখাওয়াত হোসেন রাহাত (১৭)। বিস্ফোরণে ভবনের দেয়াল ধসে তাতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। রাহাতের লাশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে অনবরত কাঁদছিলেন তাঁর বড় ভাই মো. সিফাত। রাহাতদের বাসা কেরানীগঞ্জের নাজিরাবাদ এলাকায়।
সিফাত বলে, ‘ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই আমার ভাই ওই মার্কেটে গিজার সাপ্লাই দিতে গেছিল। দেয়াল ভেঙে তার উপরে পরসে৷ কিছু বুঝার আগেই আমার ভাই শেষ।’
ছেলে রাজনের (১৭) খোঁজে হন্তদন্ত হয়ে ছোটাছুটি করছিলেন জাফর আলী। এখনো ছেলেকে দেখতে পাননি। ছেলে গুলিস্তানের একটা মার্কেটে কাজ করে। দুর্ঘটনার সময় বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। জাফর আলী বলেন, ‘ছেলের মোবাইল থেকে হাসপাতালের একজন ফোন দিয়ে বলসে। কিছুই বুঝি নাই কী হইল। ছেলের কী অবস্থা তা–ও জানতে পারতাসি না।’
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের জয়নাল স্যানিটারিতে কাজ করত মো. সিয়াম। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত সিয়াম আছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। জরুরি বিভাগের সামনে সিয়ামের স্বজনদের কান্না-আহাজারি চলছে। সিয়ামের চাচা মো. হানিফ বলেন, ‘আমিও একই বিল্ডিংয়ে কাজ করি। বিস্ফোরণে একপাশে বেশি ক্ষতি হইসে।’
সিটিস্ক্যানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বিস্ফোরণে আহত সাইফুল। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করেন। সাইফুল বলেন, ‘দোকানেই ছিলাম। হঠাৎ আওয়াজ। তারপর কিছু মনে নাই। হাসপাতালে নিয়ে আসছে লোকজন।’
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের নিচতলায় স্যানিটারি সামগ্রীর দোকান আনিকা এজেন্সি। এই দোকানের মালিক মমিনুদ্দীন ও কর্মচারী সম্রাট। দুজনের কারও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সম্রাটের চাচা আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘বিকেলেই হাসপাতালে আসছি৷ দুজনের কারও খোঁজ পাই নাই। নিহত-আহত দুই তালিকাই দেখতেসি।’ সম্রাটের বাসা বংশালে বলে জানান তিনি।