পেরেকবিদ্ধ ‘গীতাঞ্জলি’ হাতে রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যে বিধিনিষেধের প্রতিবাদ

দেশের সব পর্যায়ের মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধার প্রতিবাদে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

বিষণ্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বখ্যাত যে গ্রন্থের জন্য তিনি প্রায় এক শতাব্দী আগে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, সেই ‘গীতাঞ্জলি’র বুক ভেদ করেছে এক ঘাতক পেরেক। সৃষ্টিশীল প্রতিভা রবীন্দ্রনাথের মুখও বন্ধ। সেখানে আছে টেপের শক্ত বাঁধন। সাড়ে ১৯ ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থী।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ দেশের সব পর্যায়ের মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধার প্রতিবাদে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে।

দেশের সব পর্যায়ের মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধার প্রতিবাদে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের একুশে বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়া, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ নামের চলচ্চিত্রকে ছাড়পত্র দিতে সেন্সর বোর্ডের সময় নেওয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার-হয়রানির মতো বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে পেরেকবিদ্ধ ‘গীতাঞ্জলি’ হাতে বাক্‌রুদ্ধ ও বিষণ্ন রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে।

বাঁশ, থার্মোকল আর বইয়ের কাগজ ব্যবহার করে সাড়ে চার ফুটের বেদিসহ মোট সাড়ে ১৯ ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন চারুকলা অনুষদের কয়েকটি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। অন্য অনুষদের শিক্ষার্থীরাও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নসহ বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো এই উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম ছিল। গতকাল বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের পাশে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়।

এই উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র শিমুল কুম্ভকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশ এখন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আদর্শ প্রকাশনীকে বইমেলায় স্টল না দেওয়ার উদাহরণটি তো সামনে আছেই। বইয়ের জন্য স্টল না দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বইয়ের ওপর সেন্সরশিপ নেমে এসেছে।’

তিনি আরও বলেন, কোনো বই বা লেখার ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করা উচিত নয় বলে তাঁরা মনে করেন। কোনো বই বা লেখা যাঁর পড়ার ইচ্ছা, তিনি পড়বেন; যাঁর ইচ্ছা নেই, তিনি পড়বেন না। একটি বইয়ের বিপরীতে আরও দশটি বইও লেখা যেতে পারে। চলচ্চিত্রের ওপরও সেন্সরশিপ দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদেরও লিখতে দেওয়া হচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইনে জেলে দেওয়া হচ্ছে। এই ভাস্কর্য এসব কিছুরই প্রতিবাদ জানাচ্ছে। মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীলতার প্রতীক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ অতুলনীয়। তাই তাঁকে ভাস্কর্যের বিষয় করা হয়েছে।

চলতি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই ভাস্কর্য রাজু ভাস্কর্যের পাশে থাকবে বলে জানান উদ্যোক্তারা। তাঁদের আশা, ভাস্কর্যটি সর্বসাধারণকে মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর সেন্সরশিপ এবং সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করবে।