ঢাকা মহানগর ও জেলার ২০টি আসনের মধ্যে শুধু ঢাকা-১৮ আসনে নৌকার প্রার্থী নেই।
এই আসনে জাপার প্রার্থী দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের।
ফুটপাতের জায়গা দখল, নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় এবং ব্যানারে প্রার্থীর বাইরে অন্য নেতাদের ছবির ব্যবহার—একটি নির্বাচনী কার্যালয়েই (ক্যাম্প) তিন ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা দেখা গেছে ঢাকা-১৮ সংসদীয় আসনে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খসরু চৌধুরীর (কেটলি প্রতীক) পক্ষে উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে করা একটি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে।
খসরু চৌধুরী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। ভোটের প্রচারে তাঁর পক্ষে একটি ওয়ার্ডেই বিধি লঙ্ঘন করে তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী কোনোভাবেই একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প করতে পারেন না।
উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা খসরু চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন।
আবার ওই তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্পের মধ্যে দুটিই করা হয়েছে ফুটপাত ও সড়কের জায়গায়। এতে মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। আচরণবিধিতে বলা আছে, সড়ক কিংবা জনগণের চলাচলের জায়গায় নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা যায় না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে এই আসন গঠিত। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১, ১৭, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪। ভোটার প্রায় ছয় লাখ।
ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন হাবিব হাসান। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। এই আসন নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হওয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন তিনি। এখানে জাপার প্রার্থী দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের। ঢাকা জেলা ও মহানগরের ২০টি আসনের মধ্যে শুধু এই আসনে নৌকার প্রার্থী নেই।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই সংসদীয় আসনের উত্তরার তিনটি ওয়ার্ড (১, ৫০ ও ৫২) ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক ও একজন আলোকচিত্রী। সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে ফুটপাতের জায়গা দখল করে বাঁশ ও কাপড় দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরীর পক্ষে বেশ বড় নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে।
আচরণবিধি অনুযায়ী, আকারের দিক থেকে ৪০০ বর্গফুটের বড় কোনো নির্বাচনী ক্যাম্প করা যায় না। কিন্তু এই ক্যাম্পের আকার ৭৫০ বর্গফুটের মতো। ক্যাম্পে ঝোলানো ব্যানারে নিজের ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নেতার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও আচরণবিধি অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে পোস্টার বা ব্যানারে প্রার্থী নিজের ছবি বাদে অন্য কারও ছবি ব্যবহার করার সুযোগ নেই।
এই ক্যাম্পে ব্যবহার করা ব্যানারও নির্ধারিত মাপে করা হয়নি। বিধি অনুযায়ী, ব্যানারের দৈর্ঘ্য ৩ মিটার ও প্রস্থ ১ মিটারের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু এই মাপের চেয়ে বড় ব্যানার স্থাপন করা হয়েছে সেখানে।
উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরীর পক্ষে করা এই নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে বেশ বড় একটি ব্যানার টাঙানো। ব্যানারের নিচে লেখা ‘উত্তরা পূর্ব থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ’।
ঢাকা-১৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চারজন। তাঁদের মধ্যে খসরু চৌধুরী ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরেক নেতা নির্বাচন করছেন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এস এম তোফাজ্জল হোসেন। তাঁর প্রতীক ট্রাক।
আওয়ামী লীগের ওই দুই স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ এখানে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকিরা হলেন বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ (টেলিভিশন প্রতীক), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির দয়াল কুমার বড়ুয়া (হাতঘড়ি), মুক্তিজোটের ফাহ্মিদা হক (ছড়ি), তৃণমূল বিএনপির মোহাম্মদ মফিজুর রহমান (সোনালী আঁশ), এনপিপির মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া (আম), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নাজিম উদ্দিন (মোড়া) ও মো. বশির উদ্দিন (ঈগল)।
১ নম্বর ওয়ার্ডে খসরু চৌধুরীর পক্ষে করা ৮ নম্বর সেক্টরে একটি, ৯ নম্বর সেক্টরে একটি এবং ১০ নম্বর সেক্টরে আরেকটি নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে।
আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল খসরু চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি, খুদে বার্তারও জবাব দেননি।
এই আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে যে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে, সেটিও ফুটপাতে। এই ক্যাম্পের আকারও নির্ধারিত মাপের চেয়ে বড়।
স্বতন্ত্র এই দুই প্রার্থীর পোস্টার–ব্যানারও অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। জাপার প্রার্থী শেরীফা কাদেরের পোস্টার সে তুলনায় কিছুটা কম। তাঁর পক্ষে করা কিছু ব্যানারে আচরণবিধি ভঙ্গ করে স্থানীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে ঢাকা–১৮ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মাঠে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তাঁর কাছে অভিযোগ এলে তিনিও ব্যবস্থা নেবেন।