রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান (বাঁয়ে) ও সভাপতি ওসমান গণি। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান (বাঁয়ে) ও সভাপতি ওসমান গণি। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে

অভিযানের নামে ‘চাঁদাবাজি’ হচ্ছে

দেশের সব রেস্তোরাঁকে একটি সংস্থার অধীন এনে লাইসেন্স প্রদানসহ বিভিন্ন দাবি তুলেছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।

অভিযানের নামে সরকারি সংস্থাগুলো চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। এই সমিতির নেতারা বলছেন, বিভিন্ন রেস্তোরাঁর মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে যে সংস্থা যেভাবে পারছে চাঁদাবাজি করছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা এসব অভিযোগ করেন।

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি বিভিন্ন সংস্থা অভিযানের নামে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে—এমন অভিযোগ তুলে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। আটতলা ভবনটিতে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল। তবে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করার অনুমোদন ছিল না।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হলে কমপক্ষে ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু এখন বিনা নোটিশে ভাঙচুর করে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। রাজউকের এফ-১ ও এফ-২-এর নামে যে নৈরাজ্য চলছে, তা কোনোভাবেই কাম্য না।

প্রসঙ্গত কোনো ভবনে এফ-১-এর অনুমোদন থাকলে ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা যায়, রেস্তোরাঁ হিসেবে নয়। এফ-২-এর অনুমোদন থাকলে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি পদ্ধতির জটিলতার কারণে রেস্তোরাঁ ব্যবসার জন্য লাইসেন্স (নিবন্ধন) নেওয়া অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও জটিল বিষয়। লাইসেন্স গ্রহণের প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে জটিল করে রাখা হয়েছে। এতে অবৈধ লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, সরকারি সংস্থার অব্যবস্থাপনার দায় কেন ব্যবসায়ীরা নেবেন? নিবন্ধন নেওয়ার পুরো ব্যবস্থা এমন করা হয়েছে, ব্যবসায়ীদের প্রতি পদে পদে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়৷ ফায়ার সার্ভিসের কাছে গেলে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেন, সেখানে গেলে বলে রাজউকের অনুমতি নিয়ে আসেন, রাজউকে গেলে বলে কলকারখানার (কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর) সনদ দেন।

অভিযানের নামে সরকারি সংস্থাগুলো ‘সন্ত্রাসী কায়দায়’ রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ইমরান হাসান। তিনি বলেন, ‘অভিযানের নামে মালিকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। যে যেভাবে পারছে চাঁদাবাজি করছে।’ তিনি জানান, অভিযানে দুই শতাধিক রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হয়েছে। অভিযানের ভয়ে মালিকদের অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখেছেন।

রাজউকের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি

রাজউকের ব্যর্থতায় ঢাকা জঞ্জালের নগরীতে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। একই সঙ্গে রাজউককে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা বলেও দাবি করেছে তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজউকের ব্যর্থতার দায় ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপালে হবে না। যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সে প্রশ্নও তোলা হয়।

তবে রেস্তোরাঁ মালিকদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন রাজউকের মুখপাত্র ও প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম। রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির অভিযোগের বিষয়ে গতকাল বিকেলে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) অবস্থান নিয়েছে রাজউক। রাজউকের কোনা কর্মকর্তা-কর্মচারী রেস্তোরাঁ মালিকদের কাছে চাঁদা দাবি করলে প্রমাণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তারা বিষয়টি জানাতে পারে। তবে ভবন নির্মাণে ব্যত্যয় হলে বা কেউ অনিয়ম করলে, তাদের বিরুদ্ধে রাজউকের অভিযান চলবে।

গ্রেপ্তার ও বন্ধে সুফল আসবে না

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, কোনো নোটিশ না দিয়ে ভেঙে ফেলছেন, বন্ধ করছেন—এটা অমানবিক। সংকট উত্তরণের নির্দেশনা না দিয়ে গ্রেপ্তার ও রেস্তোরাঁ বন্ধের মাধ্যমে সুফল আসবে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান চৌধুরী। ৫ মার্চ বেইলি রোডে তাঁর মালিকানাধীন একটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দেওয়া হয়। তিনি দাবি করেন, তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় সব সনদ ও নিবন্ধন ছিল।

টাস্কফোর্স গঠনের দাবি

সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছে। তার মধ্যে রয়েছে, অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা। টাস্কফোর্স নির্দিষ্ট একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বা আদর্শ পরিচালন নীতিমালা তৈরি করবে। দেশের সব রেস্তোরাঁ সেবাকে একটি সংস্থার অধীনে এনে লাইসেন্স প্রদান করা। অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধ এবং বন্ধ করা রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়া। তা না হলে ২০ মার্চ মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

এ ছাড়া এক দিনের জন্য হলেও সারা দেশে রেস্তোরাঁ বন্ধের কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে সমিতি।