ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। পাশাপাশি এই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে তারা।

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমাগত প্রশাসনিক চতুরতা ও ক্ষমতার ছত্রছায়ায় শক্তি প্রদর্শনীর কারখানায় পরিণত হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা গত শুক্রবার আত্মহত্যা করে যেন সেই কারখানাটির আসল চেহারা জাতির সামনে খুলে দিয়ে গেলেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আত্মহত্যার আগে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা ফেসবুকের এক পোস্টে যে সত্য প্রকাশ করে গেছেন, তা পরিষ্কার আত্মহত্যার প্ররোচনাও। তাঁর ভাষায়: এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আমরাও বলতে চাই, এটাকে শুধুই নির্বিবাদ আত্মহত্যা হিসেবে দেখাটা হবে একটি ভ্রান্তি। আমরাও সন্দেহাতীতভাবে মনে করি যে এটি একটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড।’

শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে বলা হয়, অবন্তিকা তাঁর সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে লাগাতার যৌন নিপীড়ন, মানসিক উৎপীড়ন ও হুমকি–ধমকি দেওয়ার লিখিত অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে দাখিল করেছিলেন। কিন্তু দায়িত্বরত প্রক্টর বা তাঁর সহকারীরা কেউই এ অভিযোগ আমলে নেননি। উল্টো নিপীড়ক শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়ে অবন্তিকাকে ‘ভিক্টিম ব্লেমিংয়ে’র শিকার বানিয়ে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম নিপীড়নমূলক আচরণ ও শ্রবণ–অযোগ্য ভাষায় তিরস্কার করেছেন। এমনকি তিনি অবন্তিকাকে একা পেয়ে শারীরিক লাঞ্ছনা পর্যন্ত করতে চেয়েছেন। এ সবই অবন্তিকা ফেসবুক পোস্টে বিস্তারিত লিখে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর লিখে যাওয়া ফেসবুক পোস্ট তথা ‘সুইসাইড নোটটি’ ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে একটি আমলযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ নথি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’ মামলাও করেছেন অবন্তিকার মা। এ অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই পদক্ষেপ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে তদন্ত সাপেক্ষে তাঁদের বিচার যেন দ্রুততম সময়ে ত্বরান্বিত হয়, তা রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নিয়ে দোষী ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বিবৃতিতে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক কামরুল হাসান, অধ্যাপক পারভীন জলি, অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক সামিন লুৎফাসহ ৬৭ জন শিক্ষক সই করেছেন।